ঢাকা: রমজানে রাজধানীতে সকালে যানজটের নতুন ধরন শুরু হয়েছে। বাসা থেকে সড়কে বের হয়েই লম্বা যানজটের মুখোমুখি হওয়া; শেষ না হওয়া লম্বা লাইনের অংশ হয়ে যাওয়া।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালেও এমন চিত্রের ব্যত্যয় হয়নি। সকালেই যানজট ছাড়িয়েছে রোকেয়া সরণির বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে পুরাতন বিমানবন্দরের দক্ষিণ পাশ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাহাঙ্গীর গেট হয়ে মহাখালী রেলক্রসিং পর্যন্ত। যানজটে আটকে ছিল চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত। একই অবস্থা ছিল বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁও ফ্লাইওভার। এসব সড়কের কোথাও গাড়ি সর্পিল গতিতে চলেছে, কোথাও বিরক্তিকরভাবে আটকে থাকেছে। ফলে সকাল থেকেই জ্যামে নাখাল রাজধানীবাসী।
সকালের যানজটে ধীরে হলেও যাতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশেরও ব্যস্ততা কমতি চোখে পড়েনি। দেখা যায় রোকেয়া স্মরণির পূর্বপাশে অযথা একাধিক সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের যানজট সৃষ্টি করায় ড্রাইভার ও গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছে ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় অন্য কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলমান গাড়ির লাইনে মিশে যায়। মিরপুরের এ সড়কের কাজীপাড়া থেকে তালতলা অভিমুখের গাড়িগুলোকে চলতে দেখা যায় হাঁটার গতিতে। শেওড়াপাড়া সড়ক ডিভাইডারের উঠে যাওয়ার স্থান দিয়ে গাড়ির এপার-ওপার যাওয়া-আসা যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
যানজটের শহরে গণপরিবহণের দিন অনকেটাই শেষ হয়ে গেছ। মানুষ এখন বেশি বেশি এক গাড়ির এক যাত্রী নির্ভর হয়ে পড়েছে। যতটা মানুষের বৃদ্ধিজনিত কারণে রাজধানীর সড়ককে দীর্ঘ করেছে, তার চেয়ে বেশি করছে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, মাইক্রোরবাস, জিপ।
শেরে বাংলানগরে আইডিবির সামনে যানজটে স্থবির সড়কের ১৫ থেকে ২০ গজ সড়কাংশে দাঁড়িয়ে আছে ৩৯টি যানবাহন। এর মধ্যে বাস ৩টি, ছোট-বড় ব্যক্তিগত গাড়ি ২৩টি, অটোরিকশা ৫টি, আর ৮টি মটরসাইকেল। ট্রাফিক সিগনাল দেওয়ার আগে বের হেয় গেছে গোটা দশেক মটরসাইকেল। তবে কাভার্ড ভ্যান বা অযান্ত্রিক গাড়ি চোখে পড়েনি।
এ সময় দেখা যায় পাশ সড়ক থেকে ছুটে আসা গাড়ির ধাক্কার ঝুঁকি নিয়ে ক্রসিং পার হচ্ছিলেন কয়েকজন। আর সিগনাল না মানার কারণে মটরসাইকেল চালককে আটকে কাগজপত্র পরীক্ষার করছিল ট্রাফিক পুলিশ।
যেন এক অবাধ্য নগরীর জনস্রোতে বাঁধ দেওয়ার প্রাণন্ত চেষ্টার লড়াইয়ে পুলিশের।
রোজায় অফিস সময় সূচি বদলে গেছে। আগের চেয়ে সরে এসেছে অফিস সময়। অফিসে যেতে হবে যথা সময়ে। অফিসে যেতে আগের সময় দূরত্ব আর নেই হিসাবে। আগে প্রাইভেট গাড়ীতে যেখানে দেড় থেকে দুই ঘন্টা লাগতো, এখন দুই থেকে তিন ঘন্টা লাগে। কম দূরত্বের পথেও বাসা থেকে বের হতে হয় আগে। তাই সাহ্রি খেয়েই কেউ কেউ গাড়িতে চড়ে বসেন। এর প্রভাব পড়ছে সড়কেও। সকাল হওয়ার পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যানজট।
প্রধানবিচারপতির বাসভবন থেকে কাকরাইল বিএমইইটি মোড় পর্যন্ত আধঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে সব ধরনের যানবাহন। সেগুলো মাঝে মাঝে দুয়েক ফুট করে এগোচ্ছে, আবার থামছে। গাড়ির মধ্যে ঝিমুচ্ছিলেন একজন। আরোহীর সঙ্গে কথা বলতে অনুমতি চাওয়ায় প্রথমে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখেন। তারপর গাড়ির গ্লাস খুলেন। স্বাভাবিক হয়ে কথা বলেন তিনি। জানান নাম আলী আসগর, বাণিজ্যিক ব্যাংকে চাকরি করেন, মতিঝিলে যাবেন। লালমাটিয়া থেকে দুই ঘণ্টা আগে বের হয়েছেন। আর কতক্ষণ লাগবে জানেন না। কথা বলতে বলতেই সিগনাল উঠে যায়।
চিরচেনা যানজট এড়ায়নি মালিবাগ রেলক্রসিং থেকে বাড্ডামুখী সড়কেও। মালিবাগ সড়ক থেকে ফ্লাইওভার বাসের যাত্রী রবিন গাড়িতে বসে আছেন। গতিহীন গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে তিনি অস্থির হয়ে উঠেছেন। সাড়ে ৯টার পার হয়ে গেছে। অথচ এর আগেই তার মতিঝিলে পৌঁছানোর কথা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
জেডএ/এমএমজেড