নাটোর: মধুসূদন পাল আজ আর বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি কাঁচাগোল্লা রয়ে গেছে সবার মাঝে।
কাঁচাগোল্লার কদর শুধু দেশই নয়, রয়েছে বিদেশের মাটিতেও। শুধু তাই নয়, অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রাণী ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল এই মিষ্টি।
এখন সেই কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্য হিসাবে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। কাঁচাগোল্লার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে এফিডেভিটের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর কাঁচাগোল্লার আবেদন প্রক্রিয়া পাঠানো হয়েছে। নাটোরের ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। অচিরেই জিআই পণ্যের মর্যাদা লাভ করবে নাটোরের ঐতিহ্যবাহি কাঁচাগোল্লা।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এই বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নাটোরে সৃষ্টি কাঁচাগোল্লা সারাদেশে প্রসিদ্ধ। ইতিহাস সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে আমরা এই কাঁচাগোল্লার জিআই নিবন্ধনের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যেই জিআই পণ্যের মর্যাদা লাভ করবে এই বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা।
তিনি আরও বলেন, জিআই তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে কাঁচাগোল্লার ব্র্যান্ডিং ও চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয়রা জানান, কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে এক মজাদার ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রাণী ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল এই মিষ্টি। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মধুসূদন পাল নামে এক মিষ্টি বিক্রেতা।
একদিন মধুসুদন পালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারীই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় মিষ্টি তৈরির জন্য দুই মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন পাল ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। এতে কারিগর ছাড়াই এলোমেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। তবে দেখতে যাই হোক না কেন, স্বাদে ছিল অতুলনীয়।
আর এ অবস্থায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দিলেন রাণী ভবানীর রাজবাড়িতে। রাণী ভবানী সেই মিষ্টি খেয়ে খুব প্রশংসা করেন। মিষ্টি খাওয়ার পর নাম জানতে চান রানী। তখন মধুসূদন পাল পড়ে যান বিপাকে। পরে কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। সেই থেকে এর নাম হয় কাঁচাগোল্লা, যা আজও চলমান আছে। এটাই হচ্ছে কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির আসল ইতিহাস।
গল্পে গল্পে কাঁচাগোল্লার এই ইতিহাস শত শত বছর ধরে বেঁচে আছে মানুষের মুখে মুখে। কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নাটোরবাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। প্রায় ২৫০ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়ে আজও সুনাম বজায় রেখেছে এই কাঁচাগোল্লা। বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় এটি। শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা এখন প্রসিদ্ধ মিষ্টি। নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়, মূখ্য উপকরণ ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে এক প্রকার সন্দেশ।
এদিকে কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগেকে স্বাগত ও সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এই উদ্যোগেকে নাটোরবাসীর জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
এফআর