ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফেনীতে জমে উঠছে ঈদ বাজার

ডালিম হাজারী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২৩
ফেনীতে জমে উঠছে ঈদ বাজার

ফেনী: ১১ রমজান অতিবাহিত হয়েছে। ঈদের এখনও ১৯ দিন বাকি।

ফেনীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ও ছোট-বড় দোকানগুলোতে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। বাড়তে শুরু করেছে কেনা-কাটা। রোজার শুরু থেকেই শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতান, ক্ষুদ্র ও অভিজাত শপিংমলগুলোতে ক্রেতারা ধীরে ধীরে আসছেন। করোনাকালের ধাক্কা কাটিয়ে এ বছর ঈদকে ঘিরে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

ফেনীর এ ঈদ বাজারে কেবল ফেনীর মানুষরা নন, আশপাশের চট্টগ্রামের মিরসরাই, নোয়াখালী ও কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলার লোকজনও কেনাকাটার জন্য আসছেন। শহরের শতাধিক ছোট-বড় বিপণিবিতানের কয়েক হাজার পোশাক, জুতা ও কসমেটিকস দোকানের বিক্রেতাদের এখন বেড়েছে ব্যস্ততা। শহরের বিভিন্ন দোকানে এখন দেশি-বিদেশি বাহারি পোশাকের সমাহার। ঈদ বাজার ধরতে বাহারি রঙের পোশাক ঝুলিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবছরই ফেনীর ঈদবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী জানান, ঈদকে ঘিরে বাজারে বস্ত্র, কসমেটিকস ও প্রসাধনী এবং অন্যান্য গার্মেন্টসসামগ্রী মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছে। ফেনী বড় বাজারে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পোশাক, জুতা, কসমেটিকসসহ প্রসাধনী দোকান রয়েছে।  

রমজান কেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে ব্যবসায়ীরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রভাব গার্মেন্টস শিল্পে পড়ার কারণে দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও ব্যবসায়ীরা আশাবাদী গতবার থেকেও এবার বেচাকেনা আরও বেশি হবে।  

তিনি বলেন, বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতারণা রোধে ব্যবসায়ীদের নিয়মিত সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষের ঈদের বাজার শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।

শহরের বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, হরেক রকমের পোশাক, জুতা দোকানে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। পছন্দসই পোশাক মেলায় ক্রেতারাও কেনাকাটা করে তৃপ্ত। তবে অনেকে জানালেন পোশাকের দাম গতবারের চেয়ে খানিকটা বেশি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনীর ঈদবাজার ক্রমশ বড় হচ্ছে। শহরে এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেট হয়েছে। আছে আধুনিক রুচিশীল পোশাকের দোকানও। তাই ফেনীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষও এখানে ঈদের কেনাকাটা করছেন। রোজা শুরুর দিকে বেচাকেনা একটু কম থাকলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে।

ফেনী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আইনুল কবির শামীম বলেন, ফেনীতে অনেক বিপণিবিতান ছাড়াও অনেক ব্র্যান্ডের দোকান আছে। ফেনী ছাড়াও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম থেকে লোকজন ফেনীতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন। তবে এখন জেলা শহর ছাড়া উপজেলা শহরগুলোতেও বেচাকেনা হচ্ছে।

শহরের শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপণিবিতান, ফেনী সেন্টার, গ্র্যান্ড হক টাওয়ার, জুম্মা শপিং সেন্টার, তমিজিয়া শপিং কমপ্লেক্স, জহিরিয়া টাওয়ার, এফ রহমান এসি মার্কেট, মহিপাল প্লাজা গ্রিন টাওয়ার, ফেনী প্লাজা, ফেনী গার্ডেন সিটি, আপ্যায়ন আফরোজ টাওয়ার, রোকেয়া শপিং সেন্টারসহ শহরের বিভিন্ন মার্কেটে এখন ক্রেতাদের ঢল। বাহারি পোশাক, শাড়ি, পাঞ্জাবির সমাবেশসহ আকর্ষণীয় অফার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণ করছেন দোকান মালিকরা।

ফেনীর তরুণ-তরুণীরাও এখন চলতি ফ্যাশনের দিকেই ঝুঁকছেন। তরুণীদের পছন্দ টিস্যু কাপড়ের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের জামা। পাশাপাশি কাতান, জামদানি শাড়ি ও পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। নারীদের সুতি, জর্জেট ও সিল্কের হরেক রকমের শাড়িও বিক্রি হচ্ছে মার্কেটগুলোতে। ছেলেদের পোশাকেও এসেছে বৈচিত্র্য। পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, জিনস, ফতুয়া ও জুতার বাজারে তরুণদের ভিড় দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। চলছে হালকা কাজের ঝলমলে সুতির এবং সিল্কের পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি ও কটি।

ফেনী গ্র্যান্ড হক টাওয়ার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন শাহীন বলেন, ব্যবসায়ীরা ঈদ উপলক্ষে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। ফেনীর ঈদ বাজার সব সময় চাঙা থাকে। রোজার শুরুর দিক হওয়ায় এখনও বেচাকেনা কম। বাচ্চাদের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে এখন পর্যন্ত। তবে ১৫ রমজানের পরে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

শহরের শহীদ হোসেন উদ্দীন বিপণি কেন্দ্রে আছে সাড়ে তিনশ দোকান। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, বেচাকেনা খুব ভালো চলছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে কেনাকাটা। ব্যবসায়ীরা ভালো বিনিয়োগ করেছে। শহীদ মার্কেটের ব্যবসায়ী আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে সে তুলনায় এখন রোজা প্রথমের দিকে বেচাবিক্রি কম থাকলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বেচাকেনা বাড়বে।  

তিনি বলেন, করোনাকালীন যে ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তবে বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে সেটি আরও বেশি হবে।

শহরের আপ্যায়ন আফরোজ টাওয়ারের ব্যবসায়ী সম্রাট হোসেন বলেন, করোনার সময় আমরা ব্যবসা করতেই পারিনি। বসে বসে দোকান ভাড়া দিয়েছি। ব্যবসায়ীদের জন্য তখন কঠিন সময় ছিল। গত এক বছর ভালো ব্যবসা হয়েছে। এবারও প্রত্যাশা করছি ভালো বেচাকেনা হবে। সে অনুযায়ী বিনিয়োগ করেছি। ঈদ উপলক্ষে নতুন নতুন কালেকশন নিয়ে এসেছি।  

তিনি বলেন, এ এক মাস আমাদের ব্যবসার মৌসুম। রোজার শুরুর দিকে বেচাকেনা কিছুটা কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেচাবিক্রি বাড়ছে।

বড় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করে এবার বেশি দামের বস্ত্র মজুদ করা হয়নি। সাধারণ, মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির কথা মাথায় রেখে কাপড় মজুদ করা হয়েছে। আশা করি জমজমাট বেচাকেনা হবে।

অন্যদিকে বাজারে কাপড়ের সংগ্রহ আর দাম নিয়ে ক্রেতাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ফয়সাল নামে এক ক্রেতা বলেন, শপিংমলগুলোতে কালেকশন মোটামুটি ভালো। তবে দাম আমাদের নাগালের বাইরে।

ফেনী বড় বাজারে পোশাক কিনতে আসা পরশুরামের সাদিয়া সুলতানা সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ভালো মানের কাপড় সাশ্রয়ে কেনার জন্য ফেনীতে এসেছি। তবে দাম অনেক বেশি। পরিবারের সবার জন্য কিনতে গেলে অনেক টাকা নিয়ে মার্কেটে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২৩
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।