ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা সিলেট বিআরটিএর!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৩
৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা সিলেট বিআরটিএর!

সিলেট: সিদ্ধান্তের আগেই সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এমন খবর ছড়িয়ে মালিকদের কাছ থেকে সহস্রাধিক ফাইল (গাড়ির কাগজ) ও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিলেট অফিসের কর্মকর্তারা।

আজ বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) আরটিসির সভায় সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে বলেও গাড়ির মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গাড়ির মালিক। তারা বলেছেন, নতুন সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) বাবদ তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে গাড়ি প্রতি দেড়লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, এরইমধ্যে ২ হাজার সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই হিসেব মতে, গাড়িপ্রতি দেড় লাখ করে এ খাতে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট কালেক্টরেট কম্পাউন্ডে দালাল ও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারীদের মারফতে অন্তত সহস্রাধিক সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিতে কাগজ জমা নিয়েছেন কর্মকর্তারা। আলাপকালে জানা গেছে, মাছুম নামে একজন ৭০টি অটোরিকশার কাগজ জমা দিয়েছেন দেড়লাখ করে দিয়ে। আর বিআরটিএর সহকারী পরিচালকের গাড়ি চালকের মাধ্যমে মঙ্গলবারেই গাড়ির কাগজ জমা হয়েছে ৪০টি।    

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে সিএনজি অটোরিকশার সিলেট-থ-১৩ সিরিয়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা বেড়ে যাওয়ায় যানজট ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলে। এ অবস্থায় গত বছর পুনরায় সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দিতে উদ্যোগী হন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। তবে সিলেট পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিবাদের মুখে সিএনজি অটোরিকশার বিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়।

 শ্রমিক আন্দোলনের চাপের মুখে বিআরটিএ সিলেটের সাবেক সহকারী পরিচালককে বদলি করা হয়। এরপর এই পদে চলতি দায়িত্বে আসেন বিআরটিএ সিলেটে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) রিয়াজুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবহন, ট্রাক, মালিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়ার পুরোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নে হাত দেন।

বিআরটিএ সূত্র ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরটিসির এক সদস্য বলেন, আজ বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সিলেট জেলা আরটিসির সভাকে সামনে রেখে সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দিতে অন্তত সহস্রাধিক ফাইল (গাড়ির কাগজ) জমা নেওয়া।

এ বিষয়ে বিআরটিএ সিলেট অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আজ আরটিসির সভায় সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলাপ হবে। তবে অনুমোদনের আগে অটোরিকশার কাগজপত্র নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। আর মেট্টো আরটিসিতে তার প্রস্তাবিত সিদ্ধান্ত ভেঙে জেলা থেকে মেট্টোতে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। এছাড়া সর্বশেষ আরটিসির সিদ্ধান্তের বিষয় সম্পর্কেও তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।    

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রথমে মেট্টো আরটিসির সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিতে সিদ্ধান্তের বিষয়টি সামনে আসলে বিআরটিএ সিলেট অফিসের সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা অন্তত ৫শতাধিক সিএনজি অটোরিকশার মালিকানা জেলা থেকে মেট্টোতে নিয়ে আসেন। অথচ গত বছরের ২ অক্টোবর মেট্টো আরটিসির সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়- ‘সিলেট জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি অটোরিকশার মালিকরা মেট্টো ঠিকানায় বদলি হতে পারবে না। ’এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) রিয়াজুল ইসলাম এমআরটিসির সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে ৫০/৬০ হাজার নিয়ে মালিকানা বদলি করেছেন, মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

মালিকানা বদলির বিষয়টি ও প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার বিপরীতে অফিসে দেড় লাখ টাকা নেওয়াসহ অন্যান্য অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জানাজানি হওয়াতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

 নেপথ্যের বিশাল এই পুকুর চুরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় তাতে বাধ সাধেন সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী মো. ময়নুল ইসলাম। গত ২০ মার্চ বিআরটিএ সহকারি পরিচালকসহ দুই কর্মকর্তা অপসারণ চেয়ে ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে পরিবহন শ্রমিকদের মাঠে নামান। ওইদিন শ্রমিক নেতাদের নিয়ে মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন তিনি। কিন্তু দু’দিন যেতে না যেতেই বোল পাল্টে যায় তার। আন্দোলনের আলটিমেটাম থেকে সরে আসেন তিনিও। বিআরটির সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে রাজপথে নামলেও গত মঙ্গলবার ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়।

যদিও হাজি ময়নুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেছেন, একটি বিদেশি লাইসেন্স করাতে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে আসেননি। কেবল জেলা প্রশাসকের অনুরোধ রাখতে গিয়ে রোজায় মানুষের কষ্টের কথা ভেবে আন্দোলন স্থগিত রেখেছি। যদি দুই কর্মকর্তার অপসারণ না করা হয়, তবে ঈদের পর আন্দোলনে যাবেন।

 এদিকে, সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত করে রাখা হয়েছে বলেও সূত্র জানায়। কেবল আরটিসির বৈঠকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা আরটিসির বৈঠক হওয়ার কথা। এই বৈঠকে অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধনের বিষয়টিও রয়েছে।

>>আরও পড়ুন: অটোরিকশার মালিকানা বদলি করেই কোটিপতি তারা

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৩
এনইউ/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।