ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুর সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) মেয়াদোত্তীর্ণ সিবিএ’র সভাপতি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তদন্তের জন্য দুই সদস্যের একটি তদন্ত্র কমিটি গঠন করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. এনামুল হক ভূঁঞাকে আহ্বায়ক করে গত ৫ এপ্রিল গঠিত কমিটির অপর সদস্য হলেন সংস্থার হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের সহকারী পরিচালক (জরিপ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
কমিটিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সুনির্দিষ্ট মতামতসহ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দৈনিক মুক্ত খবর নামে একটি পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক পরিচয়ে জনৈক নূর আলম প্রিন্স একটি দরখাস্ত করেন। দরখাস্তে বলা হয়, গত ১৩ মার্চ মুক্ত খবর পত্রিকায় আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুর সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার তারিক আলম (টি আলম) খান। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর সংক্রান্ত মামলাটি (মামলা নং ১৫১৬/২০২১) আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে বলেও লিখিত অভিযোগে জানানো হয়।
নূর আলম প্রিন্স অভিযোগ করেন, টি আলম গত ১৯ মার্চ পেশাগত কাজে মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয়ে আসেন। বিকেল আনুমানিক পৌনে ৪টার দিকে ভবনের সপ্তম তলায় ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের সামনে আবুল হোসেন দলবল নিয়ে তার ওপর চড়াও হন। তারা রড ও লাঠি দিয়ে হামলা চালান এবং টি আলম খানকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে আহত করেন। এ সময় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বিআইডব্লিউটিএর হিসাব বিভাগের কর্মচারী আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (বি-২১৭৬) সভাপতি। সংগঠনটি ২০১৬ সাল থেকে সংস্থার সিবিএর দায়িত্ব পালন করছে। এই হিসেবে আবুল হোসেন সিবিএরও সভাপতি। তবে নির্বাচন ছাড়াই সিবিএর দায়িত্ব নিয়েছিল সংগঠনটি।
তবে শ্রম আইনে দুই বছর পরপর সিবিএ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান থাকলেও বিআইডব্লিউটিএতে বহু বছর নির্বাচন হয় না। এছাড়া সিবিএর ক্ষমতা প্রয়োগকারী বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়ন নামের সংগঠনটির গঠনতন্ত্রেও প্রতি দুই বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের কথা বলা আছে। কিন্তু ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিবন্ধিত হওয়ার পর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। এছাড়া কার্যকরী কমিটির ১৭ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই এখন কমিটিতে নেই। তা সত্ত্বেও আবুলসহ তার কিছু সহযোগী সিবিএর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এসব কারণে বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সিবিএর দায়িত্ব পালনের বৈধতা আছে কি-না, তা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। সংগঠনটির সভাপতি দাবিদার আবুল হোসেন সিবিএ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি-না, সে সংক্রান্ত কাগজপত্র তলব করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। গত ২৮ মার্চ বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের কাছে লেখা এক জরুরি চিঠিতে এ কাগজপত্রসহ আবুল হোসেনের চাকরি জীবনের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তলব করে মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
টিএ/এমজেএফ