বগুড়া: ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় কৃত্রিমভাবে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছেন বিনোদনপ্রেমীরা। শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
রোববার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে শহরের শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম সংলগ্ন ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্কে গেলে বিনোদন প্রেমীদের ঘোরাঘুরি ও আনন্দ উল্লাস চোখে পড়ে।
শহুরে জীবন মানেই যেন অনেকটা বন্দিদশা। ইচ্ছে থাকলেও ইট-পাথরে ঘেরা টোপ থেকে কেউ যেন বেরোতে পারেন না। বের করতে পারেন না আনন্দ-বিনোদনের সময়। পেশাগত কারণে কাটাতে হয় ব্যস্ত জীবন। সময় করে উঠতে না পারায় পরিবারকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করা হয়ে ওঠে না তাদের। এনিয়ে পরিবারের সদস্যরা কর্তার ওপর অভিমান করে থাকেন।
কোন কোন সময় হালকা বাকবিতন্ডাও হয়। অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কর্তার ওপর। কিন্তু পেশার ঝুক্কি ঝামেলায় কিছুই করার থাকে না। তাই শহুরে মানুষ প্রত্যেক ঈদের সময়টা ঘোরাঘুরির জন্য বেছে নেন। বিনোদনের জন্য বিভিন্ন পার্ক ও আকর্ষণীয় স্থানে ঘুরতে বের হন তারা।
শহরের ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্কের ভেতরে পা রাখতেই চোখে পড়বে ইয়া বড় দুটো বক। বিশাল ডানা উচিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ওরা। বুকের মধ্যেই শোভা পাচ্ছে আরো কিছু পাখপাখালি। ওরা যেন দাঁড়িয়ে আছে পানির ওপর। স্বাগত জানাচ্ছে বিনোদন প্রেমীদের। চারপাশে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শোভাবর্ধনকারী গাছপালা। পরিপাটি করে সাজানো গোছানো পুরো পরিবেশটা। বাহারি রঙের আঁচড় লাগানো হয়েছে পার্কের ভেতর ও বাইরের প্রতিটি দেয়ালে। রঙের ম্যাচিং ঘটিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সৌন্দর্য।
সেসঙ্গে ছেটে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নানা জাতের গাছপালা। ফলজ, বনজসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় ভেতরটায় সৃষ্টি করা হয়েছে ছায়াযুক্ত পরিবেশ। সবমিলে বিনোদনপ্রেমীদের আকর্ষণ বাড়াতে এতোসব আয়োজন। ঈদের আনন্দ উপভোগে শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে এই পার্ক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় বাড়তেই থাকে।
পার্কটিতে মেরিগোরাইন্ড, টুইস্টার, বাম্পারকার, সুপার চেয়ার, ভয়েজার বোর্ড, ফ্রকজাম, ওয়ান্ডার হুইল, প্যারাটোপা, প্রপ্রোচি, ট্রেন, গেমস গ্যালারি, প্যাডেল বোর্ডসহ বিনোদন করার মতো বিভিন্ন ধরনের রাইড রয়েছে। বয়স অনুযায়ী এসব রাইডে চড়ে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা যায় বিনোদনপ্রেমীদের।
পার্কে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষক মো. আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শহরের উপশহর এলকায় স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। পেশাগত কারণে পরিবারকে তেমন একটা সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। তাই ঈদের ছুটির দিনগুলো পরিবারের সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতে এই পার্কে আসা।
তিনি বলেন, ইট-পাথরে ঘেরা হলেও পার্কের ভেতরের পরিবেশটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। চারদিকে চির সবুজের আবহ। অনেকটা প্রাকৃতিক আমেজ বিরাজ করছে ভেতরটায়। শিশুদের খেলাধুলার বিভিন্ন আইটেম রয়েছে। এসবে ওঠে বাচ্চারা আনন্দ উল্লাস করছে।
আবীর হাসান, মেহেদী চয়ন, শামীম শেখ, শাহানাজ আক্তার, আরবী বেগমসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, সময় যত যাচ্ছে জীবনটা ততই যেন যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। জীবিকার তাগিদে সিংহভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও এতে পরিবারকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। ঈদের ছুটি তাদের পার্কে আসার সুযোগটি তৈরি করে দিয়েছে। সুযোগটি কাজে লাগাতে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এখানে আসা।
তারা বলেন, তাদের মতো বিনোদনপ্রেমী অনেকের দেখা মেলে পার্কে। কেউ বা একা আবার কেউ পরিবার নিয়ে এখানে এসেছেন। এছাড়া বিপুল সংখ্যক বন্ধু-বান্ধব পার্কে এসে আনন্দ উল্লাস করছেন। কেউ দলবেধে আবার কাউকে কাউকে একাই ঘোরঘুরি করছেন।
কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এখন বিনোদন করতে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা বিনোদন কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বিনোদনপ্রেমীদের। যতই সময় যাচ্ছে জীবনটা ততই যেন যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। মানুষকে জীবিকার তাগিদে সিংহভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ইচ্ছে থাকলেও পরিবারকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। ঘুরে বেড়ানোর জন্য বর্তমানে কৃত্রিমভাবে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রগুলো তাদের একমাত্র ভরসাস্থল।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৩
কেইউএ/এএটি