ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন করে সাগরে দস্যুদের তাণ্ডব, আতঙ্কে জেলেরা 

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
নতুন করে সাগরে দস্যুদের তাণ্ডব, আতঙ্কে জেলেরা 

পাথরঘাটা (বরগুনা): নতুন করে সাগরে তাণ্ডব শুরু হয়েছে, এ কারণে দস্যু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলেসহ মৎস্যজীবীদের মধ্যে। কক্সবাজারের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে টেনে আনা ডুবন্ত ট্রলার থেকে অর্ধগলিত ও হাত পা বাঁধা অবস্থায় ১০ জেলের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর‌ নতুন করে মৎস্যজীবীদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে।

 

গত কয়েক বছর ধরে সাগরে দস্যুতা কমে গেলেও আবার শুরু হয়েছে দস্যুদের তাণ্ডব। এতে যেমন নতুন করে জেলেসহ মৎস্যজীবীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে, তেমনি মৎস্য সেক্টরে নতুন করে ধসের আশঙ্কাও করছে‌ অনেকে।

এদিকে কক্সবাজারে মাছ ধরা ট্রলারে অর্ধগলিত ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বরগুনার পাথরঘাটা থেকে সাগরে যেতে গড়িমসি করছে অনেক জেলে। একে তো কিনারাহীন অথৈ সাগরে জেলেদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে তার মধ্যে নতুন করে দস্যুদের তাণ্ডব এখন‌ নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে বঙ্গোপসাগরে পায়রা বন্দর থেকে পশ্চিমে বয়া এলাকায় মাছ ধরা একটি ট্রলারে দস্যুদের হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ট্রলারে ১৮ জেলের ওপরে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে ৯ জেলেকে গুরুতর জখম করে দস্যুরা। এসময় জীবন বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হয় ৯ জেলে। কয়েকদিন পর নিখোঁজ ৯ জেলের মধ্যে ৪ জনের মরদেহ সাগর থেকে উদ্ধার করে জেলেরা, অপর এক জেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এখনো অপর ৫ জেলের কোনো সন্ধান মেলেনি।  

কত কয়েকমাস ধরে পৃথক দস্যুতার ঘটনা ঘটায় জেলেসহ মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি বার বার উঠে আসছে। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে দস্যুমুক্ত থাকলেও আবার হামলার ঘটনা ঘটায় জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। যার কারণে আবারও উপকূলের মৎস্যজীবীদের মধ্যে র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের দাবি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

গভীর সাগরে জীবন বাজি রেখে মাছ ধরা জেলে আবদুল্লাহ, সগির হোসেন, জাকির হোসেন বলেন, এমনিতেই আমরা সাগরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করে মাছ ধরি। একটা সময় ছিল সাগরে দস্যুদের বিচরণ, পাস কার্ড নিয়েও সাগরে যেতে হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে সাগরে একেবারেই দস্যু শুন্য ছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়। দস্যু দমনে র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি করছি।

মৎস্যজীবীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে নির্বিঘ্নে সাগরে মাছ ধরেছেন জেলেরা। এখন আবারও দস্যুতা শুরু হওয়ায় জেলেদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে পাথরঘাটায় র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি করে এলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। তারা মনে করেন, দস্যু নির্মূলে উপকূলে র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের বিকল্প নেই।

অন্যদিকে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সাগরে অস্থিরতা তৈরি করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় পাথরঘাটায় র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের দাবি করায় আশ্বস্ত করেছিলেন র‌্যাব জিডি আবদুল্লাহ আল মামুন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘দস্যুতা করলে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। আমরা সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করেছি। সমুদ্রও আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখবে র‌্যাব।

তিনি বলেছিলেন, এখন পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে এলোপ্যাথি বন্ধ করে রেখেছি। এলোপ্যাথি কিন্তু পকেটে আছে। যার যে ব্যবস্থা দরকার আমরা সেই ব্যবস্থাই নেব।

উপকূলের জেলেদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, দস্যু অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটায় র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি। তাছাড়া জেলেদের জীবনের নিরাপত্তা, ‍সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতসহ দুর্যোগকালীন এবং দস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করতে দ্রুত উদ্ধার যান (হেলিকপ্টার) এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরও বলেন, আগে তো সাগরে দস্যুরা অধিকাংশ সময় হামলা করে সর্বস্ব লুটে নিত এবং অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত। এখন দেখছি ভিন্ন। গুলি করে, পিটিয়ে খুন করে সাগরে ফেলে দেয়। এমনকি আলামতও নষ্ট করে ফেলে। এমন চলতে থাকলে তো একটা সময় জেলেরা ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এর প্রভাব পড়বে মৎস্য সেক্টরের ওপর।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সাগরে দস্যুদের অত্যাচার আবার শুরু হয়েছে। জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সাগরে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও উপকূলে নৌপুলিশের টহল জোরদার ও পাথরঘাটায় র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপন ও সুন্দরবন এলাকায় নৌবাহিনীর ঘাঁটি করার দাবি করছি। এ বিষয় সরকারকে আগের মতো আন্তরিক হয়ে দস্যু দমনে কাজ করার দাবি করেন তিনি।

র‌্যাব-৮ এর পটুয়াখালী কোম্পানি অধিনায়ক তুহিন রেজা বলেন, র‌্যাবের স্থায়ী ক্যাম্পের বিষয়ে আইনগত, জনবল এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বড় সিদ্ধান্তের বিষয় থাকে। এ অঞ্চলে একটি ঘটনা ঘটলে আমাদের দুটি নদী পার হয়ে যেতে হয়, ক্ষেত্রে পাথরঘাটায় একটি সাব ক্যাম্প হলে আমাদের জন্য এবং স্থানীয়দের জন্য ভালো হয়। ইতোমধ্যেই আমি সাব ক্যাম্পের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।