ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সামগ্রিকভাবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে রেকর্ড সংরক্ষণ প্রয়োজন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
সামগ্রিকভাবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে রেকর্ড সংরক্ষণ প্রয়োজন

ঢাকা: সামগ্রিকভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি উদ্যোগে রেকর্ড সংরক্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ও বিজ্ঞজনরা। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে সংগীতের যে অধোগতি তা থেকে রেহাই পেতে ও সংগীতের অবিমিশ্র আনন্দ পেতে চাইলে আমাদের রেকর্ডে ফিরতে হবে বলেও মন্তব্য তাদের।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) রেকর্ড স্টোর ডে উপলক্ষে ‘রেকর্ড স্টোর ডে ২০২৩ বাংলাদেশ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।  

রাজধানীর ডেইলি স্টার আর্ট গ্যালারিতে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় এ আয়োজন। সকালে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মতিউর রহমান।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, আজকাল কোথাও যাওয়া হয় না। আজ না এসে পারা গেল না। কারণ এর সঙ্গে আমার প্রাণের সম্পর্ক। ১৯৬৫ সালে প্রথম নিজের রেকর্ডটি পেয়েছিলাম। অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। তারপর অনেক যুগ পেরিয়ে গেছে। এখন ইন্টারনেটের যুগ। বোতাম টিপলেই সব সচল। তখনকার সময়ে গান রেকর্ড ছিল বেশ কষ্টকর। তবে গ্রামোফোন রেকর্ডে বা ভাইনাল রেকর্ডে শব্দের যে গভীরতা ও অবিমিশ্র আনন্দ তা ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, আজকাল সংগীত পরজীবী হয়ে গেছে। ইন্টারনেট আসার পর ভিডিও ছাড়া গানের আর কদর নেই। সংগীতের এ যে অধোগতি তা থেকে রেহাই পেতে ও সংগীতের অবিমিশ্র আনন্দ পেতে চাইলে রেকর্ডে আমাদের ফিরতে হবে। অনেক আগে থেকেই অনেকে বলেছিলেন প্রিন্ট মিডিয়ার বিলুপ্তি ঘটবে। কিন্তু আজও সকালে চায়ের সঙ্গে ছাপা কাগজ না পেলে, হাতে ধরে বই না পড়তে পারলে শান্তি লাগে না। তেমনই রেকর্ড টিকে থাকবে।

সঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীন বলেন, ব্যক্তিগতভাবে রেকর্ড অনেকেই সংরক্ষণ করেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এ উদ্যোগ নিতে পারেন। এটা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এখন কষ্ট লাগে দেখলে যে, শিল্পীদের গান নিয়ে ব্যবসা করে অনেকে টাকা কামিয়েছেন। শিল্পীরা সে অর্থে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেননি। এছাড়া সংগীতের নামে যথেচ্ছাচার চলছে। অল্প সময়ে নামধাম, গাড়িবাড়ি করার চেষ্টা সবার মধ্যে দেখা যায়। অনেকে দুয়েকটা গান শিখতে আসে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার লাভের জন্য। অথচ অনেক গুণী শিল্পীকে দেখেছি একসঙ্গে অনেকগুলো টাকা তারা দেখেননি। সংগীত হলো ঐশ্বরিক দান। এটি অত্যন্ত অভিমানী। খুব অধ্যাবসায় না থাকলে এটি ধরা দেয় না।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সব গান আমরা যে বুঝে শুনি তা নয়। আমরা শৈশব-কৈশোর থেকে গান শুনি। এখনও প্রতিদিন গান শুনি। কোনো না কোনো গান। অনেক গানের রেকর্ড সংরক্ষণ করি। হয়তো শিল্পীর জন্য, হয়তো গানের কথা বা সুরের জন্য। রেকর্ড সংগ্রহ, গান সংগ্রহ হলে একটা ভালো কাজ হয়। তবে আমাদের একটা সোনালী সময়ের গানের রেকর্ড হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা আশাব্যাঞ্জক যে, এখন আবার নতুন করে রেকর্ড সিডি বিক্রি বাড়ছে।

তিনি বলেন, ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা রেকর্ড বের হচ্ছে। হিন্দুস্তান রেকর্ডের গানের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেটসহ অনেক জায়গায় রেকর্ডের দোকান ছিল। এখন দোকানগুলো নেই। এগুলো সংরক্ষণে আমাদের কাজ করতে হবে। গান শুনলে মন ভালো হয়ে যায়। অনুপ্রাণিত বোধ করি। গান মানুষকে মানুষ করে তোলে।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, মানুষ এ ধরনের কাজ করে বলেই সমাজ এখনও সুন্দরভাবে টিকে আছে। রাজনীতি, সমাজকে পরিবর্তন ও উন্নত স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংগীতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

উল্লেখ থাকে যে, গ্রামোফোন ও ভাইনাল রেকর্ড মাধ্যমে আমাদের উপমহাদেশেও বাংলা, হিন্দি ও উর্দু গানের বড়সড় একটি বাজার ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বেশির ভাগ গান প্রকাশ হয়েছিল কলকাতার হিন্দুস্তান রেকর্ড থেকে। ঢাকায় ছিল ঢাকা রেকর্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের প্রথম রেকর্ড গোপনে এ প্রতিষ্ঠান থেকেই বের হয়েছিল বলে অনেকে ধারণা করেন। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এ রেকর্ডে কোনো কোম্পানির লেবেল সাঁটা হয়নি। অবশ্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা রেকর্ড থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রকাশ করা হয়েছিল ৭ ইঞ্চি রেকর্ডে। এছাড়া বাংলাদেশের বহু চলচ্চিত্র এবং আধুনিক গানের রেকর্ডও এ ঢাকা রেকর্ড থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল, যা এখন শুধুই ইতিহাস।

এ আলোচনায় একটি বিষয় লক্ষণীয়, রেকর্ড স্টোর ডে উদযাপন শুরুর পর থেকে ভাইনাল রেকর্ডের প্রচার ও প্রসার পুনরায় বাড়তে শুরু করে। যে কারণে রেকর্ড স্টোর ডে উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের অ্যানালগ অডিও তথা রেকর্ডের ঐতিহ্য পুনরায় ফিরে আসবে বলে আশা আয়োজকদের।

‘রেকর্ড স্টোর ডে ২০২৩ বাংলাদেশ’ উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আলোচনা অনুষ্ঠান ছাড়াও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডেইলি স্টার আর্ট গ্যালারিতে ছিল বিভিন্ন ধরনের রেকর্ডের প্রদর্শনী ও বিক্রয়। এতে গান ভালোবাসা মানুষরা অংশ নেন আনন্দচিত্তে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।