ঢাকা: রাষ্ট্র সামরিক-বেসামরিক ক্ষুদ্র ধনিক গোষ্ঠীর হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে এটা নিয়ে দ্বিমত করার সুযোগ নেই।
রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ব্র্যাক ইনে ‘এস্টিমেট গ্যাপ অব দ্যা সোশ্যাল সেফটি নেট প্রোগ্রামস ইন বাংলাদেশ: হাউ মাচ এডিশনাল রিসোর্সেস রিকোয়ার্ড ফর কমপ্রেহেনসিভ সোশ্যাল ইনক্লুশন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন তিনি। সেখানেই এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
মেনন বলেন, পেনশন-সঞ্চয়পত্রের সুদ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে দেখানো হয়। আমর বলেছি পেনশন, সঞ্চয় পত্রের সুদ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে না দেখাতে। কিন্তু আমাদের কথা শোনা হয়নি। যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে; সরকার এখন সেটা মানছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শুধু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কাজ শুরু করে গিয়েছিলেন পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সে কাজ করছেন। কিন্তু নিচতলার মানুষ যদি খেতে না পায় তাহলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। আগামীতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধি সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী মানুষের তালিকা করতে ব্যর্থতা থাকলে এ দায় সরকারের একার নয়। সমাজের অন্যান্যদেরও দায় আছে। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে যারা কাজ করছে, তাদের মনোযোগ বাড়ি আর সম্পদ বৃদ্ধির দিকে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির দিকে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। অথচ, তারাই বিভিন্ন দেশের সভা-সমিতি, সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ সময় পল্লীর পাশাপাশি শহরের হত দরিদ্র মানুষের সহায়তায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষাখাতে বড় বিনিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, অবকাঠামো খাতে বড় বড় বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা খাতে হয়নি। শিক্ষা খাতে বড় বিনিয়োগ না হলে পদ্মা সেতু পাহারা দেওয়ার জন্য গার্মেন্টস কারখানার মতো বিদেশ থেকে লোক আনতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বয়স্ক ও স্কুলগামী শিশুরা যে ভাতা পাচ্ছে তা বাড়ানো তাগিদ দিয়েছে সুবিধা ভোগী ও তাদের অভিভাবকরা। তাদের ৯৭ শতাংশ মনে করছে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করে দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং ৮০ শতাংশ শিশুর অভিভাবক মনে করছে ভাতা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা দরকার। বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার মতো সুবিধাভোগী নির্ধারণের ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হচ্ছে। ইউপি মেম্বর-চেয়ারম্যানরা সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পক্ষপাত করছে। তারা বাড়ির আশে-পাশের মানুষ ও আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকাভুক্ত করছে। এর ফলে ভাতা বিতরণের যে লক্ষ্য তা ব্যাহত হচ্ছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে ভাতা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, সুবিধা বিতরণে অপচয় রোধে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে সঠিক ডেটা সম্ভার তৈরি করতে হবে। যাতে অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
জেডএ/এসআইএ/এমজে