রাজশাহী: রাজশাহী নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার দুই নম্বর সড়ক। সোমবার (১ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে একটি ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য বালু টানছিলেন আজের আলী (৫৫)।
'মে দিবস' প্রশ্নে দিনমজুর আজের আলী বলেন, দিবস খেতে দেবে? কাজ করলেই খাওয়ার কেনা যাবে। তাই মে দিবস কেন কোনো বিশেষ দিবসই তাদের মনে দাগ কাটে না। কারণ দিবস মানেই ছুটি। আর ছুটি মানেই তাদের জন্য কর্মহীন একটি দিন। আর যেদিন কাজ থাকে না সেদিন চুলাও জ্বলে না! তাই তারা সবসময়ই কাজ করতে চান। তাদের কাছে বছরের প্রতিটি দিনই সমান। তবে মে দিবসে অনেকে কাজ করতে বাধা দেন। যেটা তাদের কাছে ভালো লাগে না বলেও জানান।
কথা হয় তার সহযোগী শ্রমিক মিজানুর রহমানের (৩০) সঙ্গে।
মিজানুর জানান, নগরের কাপাশিয়া এলাকা থেকে এখানে কাজ করতে এসেছেন তিনি। ঈদের পর আজই প্রথম এখানে কাজ পেয়েছেন। এর আগে পরপর তিনদিন ঘুরে গেছেন। ঈদের ছুটি চলা কারণে কোনো কাজ পাননি। আর গতকাল গাড়ি ভাড়া ছিল না। তাই কাজের সন্ধানে ঘর থেকেই বেরোতে পারেননি। আজ ভোরে পকেটে ১৫ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। সকালে কাজ পেয়ে তিনি খুবই খুশি হন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করলে নগদ ৫শ টাকা পাবেন। সেই টাকা দিয়ে বাজার করে বাড়ি ফিরলে স্ত্রী-সন্তানের মুখে হাসি ফুটবে বলে জানান মিজানুর রহমান।
এক প্রশ্নের জবাবের মিজানুর রহমান বলেন, মে দিবস সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু জানেন না। তবে এটুকু জানেন এদিন সাধারণত বাস চলাচলসহ অনেক কিছুই বন্ধ থাকে। আর কাজ করতে সবাই বাধা দেন। তবে কাজ না করার চেয়ে কাজ করা তাদের জন্য অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেন মিজানুর রহমান।
আর তাদের পাশেই মাথায় বিশাল ইঁটের বোঝা নিয়ে হাঁটছিলেন ১৭ বছরের কিশোর তারেক হোসেন শান্ত। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা। রোজ কাজের জন্য এই শহরে আসেন। মে দিবস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন।
তারপর জানান, ওই ব্যাপারে তার কোনো ধারণাই নেই। জীবন ও জীবিকার তাগিদে কাজ করা লাগবে। তাই তিনি কাজ করছেন বলে জানান।
অথচ আজ সকাল থেকেই রাজশাহীতে পালিত হচ্ছে মে দিবস। মে দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সকাল থেকেই শ্রমিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু শহরের একপাশে যখন মে দিবস পালিত হচ্ছে তখন অন্য পাশের শ্রমজীবী মানুষের কাছে এই বিশেষ দিবস ভিন্ন কোনো অর্থ বহন করছে না। এভাবেই পার হচ্ছে দিন, বছর ও যুগ। বহুলাংশেই শ্রমিকদের রুটি-রুজি প্রাপ্যতা নিশ্চিত হচ্ছে না। বালাই থাকছে না কোনো নির্ধারিত কর্মঘণ্টার। এমনই মন্তব্য করেন মানবাধিকার কর্মী সুব্রত কুমার পাল। তার মতে, মে দিবসের আহ্বান আজও সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পাইনি। এজন্য আরও লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে শ্রমজীবীদের।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটের শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালে শ্রমের ন্যায্যমূল্য এবং আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলন দমন করতে সেদিন গুলি চালানো হয়। সেদিন ১০ শ্রমিকের আত্মত্যাগে গড়ে ওঠে বিক্ষোভ। প্রবল জনমতের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের সংগ্রামী ঐক্যের অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৮৯০ সাল থেকে সারা বিশ্বে শ্রমিক সংহতির আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে মে মাসের ১ তারিখ পালিত হচ্ছে 'মে দিবস' হিসেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২৩
এসএস/এএটি