ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রয়াত সাংবাদিকদের স্মরণে স্মরণিকা প্রকাশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৬ ঘণ্টা, মে ১, ২০২৩
বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রয়াত সাংবাদিকদের স্মরণে স্মরণিকা প্রকাশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার

ঢাকা: ব্রিটিশ ভারতের গোটা বাংলায় সাংবাদিকতার বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। পাকিস্তান এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ সাংবাদিকতাকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা চিরস্মরণীয়।

কিন্তু কালের আবর্তে তাদের অনেকেই বর্তমান প্রজন্মের কাছে অপরিচিত ও অনেকে তাদের ভুলতে বসেছেন। তাই বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রয়াত স্মরণীয় ও বরণীয় সাংবাদিকদের স্মরণে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করেছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি।

সোমবার (১ মে) বিকেলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রয়াত স্মরণীয় ও বরণীয় সাংবাদিক স্মরণ সভায় এই স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার ২৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এই স্মরণ সভার আয়োজন করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি।

স্মরণিকাটিতে আবুল কালাম শামসুদ্দিন, আবুল মনসুর আহমদ, মুজীবুর রহমান খাঁ, খোন্দকার আব্দুল হামিদ, সৈয়দ নূরুদ্দীন, মাহবুব আনামসহ ৪০ জন ময়মনসিংহের প্রয়াত সাংবাদিকের ব্যক্তি ও কর্মজীবন তুলে ধরা হয়। স্মরণ সভার শুরুতে প্রয়াত এসব সাংবাদিকের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন সবাই।

স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতিকে ধন্যবাদ জানাই এতো চমৎকার তথ্যবহুল একটি স্মরণিকা প্রকাশ করার জন্য। এই স্মরণিকার মধ্যে ১০-১২ জন আছেন, যাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। প্রেসক্লাবের দিনের পর দিন কাটিয়েছি। যদি বলা হয়, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পথরেখা তারা তৈরি করেছেন, তাহলে মনে হয় না সামান্যতম ভুল হবে।  

তিনি আরও বলেন, এসব স্মরণীয় বরণীয় মানুষেরা সাংবাদিকতার ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। তাদের চর্চা না করলে, তাদের কার্যক্রম চর্চা করতে না পারলে কোনো অবস্থাতেই সাংবাদিকতার বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। আমাদের দুর্ভাগ্য সাংবাদিকতায় তারা যে অবদান রেখে গেছেন, সেটি লিখিত আকারে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের রচনাগুলো খুঁজে বের করে এখনকার সাংবাদিকরা যদি চর্চা করেন, তাহলে তারা আজকের দিনে বা ভবিষ্যতে আরও চমৎকারভাবে টিকে থাকতে পারবেন।

মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পূর্ববর্তীকালে সাংবাদিকতার একটি ধারা ছিল, পত্রিকার সংখ্যা সীমিত ছিল, সাংবাদিকতা করা মানুষের সংখ্যা সীমিত ছিল, ক্ষেত্রটা খুব একটা বিস্তৃত ছিল না। স্বাধীনতা সংবাদপত্রের বিকাশের সুযোগটা তৈরি করে দিয়েছে। ১৯৭২ সালে আমাদের সংবাদপত্রের পরিধি অনেক বড় হয়। পরবর্তীতে এরশাদের পতনের পর আবার একটি সুযোগ আসে। যখন আমাদের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত হয়। এখন তো আমরা সীমাহীন একটি জগতে বসবাস করি।

তিনি বলেন, সীমাহীন বলতে আমি বলছি, এখন কোনটা সংবাদপত্র আর কোনটা সংবাদপত্র নয়, কোনটি সম্প্রচার মাধ্যম আর কোনটি সম্প্রচার মাধ্যম নয়- এটা আমার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় খুঁজে বের করার ক্ষমতা রাখে না। কেবল মাত্র নিবন্ধিত বা জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদিত একটি তালিকা হয়তো আছে। কিন্তু এই তালিকার মধ্যে যদি ১০টি নাম থেকে থাকে, তাহলে গণমাধ্যম আছে ১০০টি। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা চিন্তা করেন, তাহলে এই গণমাধ্যমের সংখ্যা তো কোটি কোটি।

তিনি আরও বলেন, এখন ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বেনামি নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এটা ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে শুরু করে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, রাষ্ট্র বিরোধী অপপ্রচার ও অন্যান্য বিষয়গুলো চলছে। এটি এখন রাষ্ট্রের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগের এই অপরাধ দমন করার জন্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত হাতিয়ার ও দক্ষতা দিতে হবে।  

আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের সব প্রয়াত সংবাদিকদের নিয়ে একটি স্মরণিকা তৈরি করা হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বরেণ্য যেসব জীবিত সাংবাদিক আছে, তাদের নিয়েও কোনো পুস্তক বের করা হলে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, আমাদের যারা কিংবদন্তী সাংবাদিক আছেন, তাদের আমার যত জানবো, শ্রদ্ধা করবো, স্মরণ করবো, আমরা নতুনরা তত বেশি সমৃদ্ধ হবো। সেজন্য আমরা বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রয়াত সাংবাদিকদের নিয়ে একটি স্মরণিকা তৈরি করেছি। প্রতিটি জেলা থেকে যদি কিংবদন্তীদের নিয়ে এমন পুস্তক তৈরি করা যায়, তাহলে একটি তথ্যভাণ্ডার আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে দিতে পারবো। তখন তারা সেটি দেখতে পারবে, জানতে পারবে, চর্চা করতে পারবে।  

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে যারা সাংবাদিকতা করেন, তাদের সামনে এই সংকলনটি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। তারা তাদের পথ ধরে সাংবাদিকতা করতে পারবেন।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয় হাকিমের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব আব্দুস সালাম ফারুক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুর হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক ইউসূফ শরীফ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট ফয়েজুস সালেহীন।

স্মরণ সভা শেষে অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার ২৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ২৩৬ পাউন্ডের একটি কেক কাটা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২৩
এসসি/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।