টাঙ্গাইল: আলোচিত পিলখানা ঘটনায় দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বদরুল আলম বাদল। ১৬ বছরে নানা পরিবর্তনের কারণে চিরচেনা গ্রামটি অপরিচিত তার।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নবগ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে বদরুল আলম বাদল। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বদরুল তৃতীয়। তাদের পরিবারে বদরুলই বেশি শিক্ষিত এবং একমাত্র সরকারি চাকরিজীবী ছিল। আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে সে সময় যোগ দিয়েছিল বিডিআরে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার। পিলখানার ঘটনায় আসামি হয়ে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর পরিবারে আরো দুর্যোগ নেমে আসে।
৪০ দিন বয়সী একমাত্র মেয়ে সোনালী এখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। দীর্ঘ ১৬ বছর বাবার আদর থেকে বঞ্চিত সোনালী র্দীঘদিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত, ঘুরছে বাবার হাত ধরে। বাড়িতে আসার খবরে গ্রামের মানুষজন ভিড় করছে বদরুলকে দেখতে।
স্বামী না থাকায় ৪০দিন বয়সী শিশুকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে স্ত্রী রেখা খাতুনকে। স্বামীর ফেরার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বামী ফেরায় খুশি তিনিও । তবে বিনাদোষে কারাভোগ ও বিডিআরের চাকরি ফেরতসহ ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বদরুল আলমের স্ত্রী রেখা আক্তার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি টিনের ঘর রয়েছে বিডিআর বদরুল আলমের। ঘরের মেঝে কাঁচা। মেয়েকে নিয়ে টিনের ঘরে থাকতো স্ত্রী রেখা আক্তার। রান্না ঘরটিও জরাজীর্ণ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে বিডিআরে চাকরি নেওয়া বদরুল ২০০৯ সালে পিলখানায় বিস্ফোরক মামলায় ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে বাড়ি এসেছেন গত বৃহস্পতিবার। বিডিআরে চার বছর চাকরির পর বদলির আদেশ হয়েছিল পিলখানা থেকে। শেষ প্যারেড করে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসার কথা থাকলেও ছুটির কাগজ হাতে না পাওয়ায় ব্যারাকেই থেকে যেতে হয়েছে। পরেরদিনই পিলখানার ট্রাজিডির ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরও দুইমাস পিলখানাতেই চাকরি করেছেন তিনি। পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত না হয়েও ঘটনার দুইমাস পর আসামি করা হয় তাকে। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা আলাদাভাবে দুইটি মামলা হয় বদরুলসহ কয়েকশ জোয়ানের বিরুদ্ধে। পরে হত্যা মামলা থেকে ২০১৩ সালে খালাস পেলেও বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে রাখা হয় তাকে। কারাগারে থাকার অবস্থায় ২০১৪ সালে মা আর ২০১৯ সালে মারা যায় বাবাও । বাবা ও মা মারা যাওয়ার সময় তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
নবগ্রামের নাসির বলেন, বদরুলরা খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। চাকরি করে ভাগ্য ফেরাতে চেয়েছিল। কিন্তু পিলখানার ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেছে পরিবারের। জেলখানায় তাকে দেখতে যাওয়ার মতো কেউ ছিল না।
বদরুলের মেয়ে সোনালী জানায়, ৪০দিন বয়সে বাবা জেলে গিয়েছিল। ছোটবেলায় গিয়েছি জেলখানায় বাবাকে দেখতে। কিন্তু তার বা তাকে ধরতে দেওয়া হয়নি। বাবাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। স্কুলে যখন সহপাঠীদের বাবারা যেত তখন বাবা না থাকার অভাব বুঝেছি। বাবা এখনো আমার কাছে ফিরে এসেছে এটাই বড় পাওয়া। আজ আমি খুব খুশি। তবে বাবার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
বদরুলের স্ত্রী রেখা খাতুন বলেন, অপরাধী না হয়েও স্বামীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। প্রথম তিন বছর চাকরির অর্ধেক টাকা পেলেও পরবর্তিতে আর কোনো টাকা দেওয়া হয়নি সরকার থেকে। মেয়েকে নিয়ে খুবই কষ্টে দিনপার করেছি এখনও করছি। মেয়েটা বড় হয়েছে বাবাকে ছাড়া। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, চাকরিতে বহালসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক আমাদের।
বিডিআর বদরুল আলম বাদল বলেন, পিলখানার ঘটনার সময় ব্যারাকে থেকেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া চাকরিচ্যুতও করা হয়। চাকরি পুর্নবহাল, মামলা হতে অব্যাহতিসহ ১৬ বছরের পাওনাদি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
জেএইচ