ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মায়ের দেওয়া ১১০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু, এখন ৪০০ ফ্রিজের মালিক খাইরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
মায়ের দেওয়া ১১০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু, এখন ৪০০ ফ্রিজের মালিক খাইরুল নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে খাইরুল ইসলাম

বরিশাল: মায়ের দেওয়া ১১০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে এখন ৪০০ ফ্রিজ ভাড়া দিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন বরিশাল নগরির খাইরুল ইসলাম। শুধু তিনি বা তার পরিবারই নয়, এখন তার ব্যবসার ওপর নির্ভর করে আরও ৫ কর্মচারীর সংসার চলছে।

তবে তার এ উত্থানের পেছনের পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। মেধা আর শ্রম খাটিয়ে বর্তমানে বরিশাল নগরে ব্যবসায়ী হিসেবে একটা পরিচয় ঘটেছে খাইরুলের।

বরিশাল নগরের কলেজ এভিনিউ রোড এলাকায় রয়েছে খাইরুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।  

নিজের ব্যবসার শুরু ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্মৃতিচারণ করেন খাইরুল ইসলাম।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, যখন আমি এসএসসি ২০০৬ সালে পরীক্ষা দিতে যাব, তখন আমার মা আমাকে ১১০ টাকা দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন কখনও যেন এই টাকা দিয়ে ব্যবসা করি।  তখন মাকে বলেছিলাম এই টাকা দিয়ে কি ব্যবসা করব? তখন মা বলেছিলেন এই টাকা দিয়া যদি ব্যবসা করস তাহলে লাখ টাকা কামাবি বাবা, আর না করলে কিছুই করতে পারবি না।  এরপর মায়ের দেওয়া টাকাটি যত্ন করে ট্রাঙ্কের মধ্যে রেখে দিই।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে এইচএসসি পাসের পর বড়ভাই ও নগরের করিম কুটির এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মুসা ১২ হাজার টাকা দেন ব্যবসার জন্য। সেই টাকা এডভান্স দিয়ে ৩০ বস্তা চাল কিনে মুদি ব্যবসা দিই। ওই সময় আমার কাছে থাকা মায়ের ১১০ টাকাও ওই চাল ব্যবসায়ীকে দিয়ে দিই। কিন্তু মুদি ব্যবসা করতে করতে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা বাকি পড়ে যায়। আর তখন আমার পালিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়ে যায়। কিন্তু আমি সাহস নিয়ে এগিয়ে যাই।

আল্লাহর কাছে সহায়তা চাইতে থাকেন জানিয়ে খাইরুল বলেন, বাকি টাকা চেয়েও যখন পাচ্ছিলাম না, তখন (২০১৫ সালে) আমার মুদি দোকানে থাকা ফ্রিজটি ভাড়া দেওয়ার চিন্তা করি। কয়েক মাস (মাসিক ভাড়া ২ শত টাকা) ভাড়া দেওয়ার পর যে ভাড়া নিয়েছিল সে ফ্রিজটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর অনেক কষ্টে ফ্রিজটিকে নিজের কাছে ফেরত আনি। আর তখন মনে মনে জেদ চেপে বসে যে, আমার শেষ অবলম্বন ফ্রিজটি যখন মানুষ মেরে দিতে চাচ্ছে, তাহলে আমি এ ফ্রিজ ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করব। আর তখন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চিন্তায় ভাঙ্গারি ফ্রিজ কেনা শুরু করি। কেটে ছেড়ে ঠিকঠাক করে যদি মানুষের কাছে ভাড়া দিই তাহলে তো কিছু উপার্জন হবে। এই চিন্তা থেকে ২০১৬ সালে পুরোদমে ফ্রিজ ভাড়া দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিই।  

এই ব্যবসায়ী বলেন, মাসে ৩০০ টাকায় ফ্রিজ ভাড়া দিতে শুরু করি। ২০১৬ সালেই আমার কাছে ৩০ টি ফ্রিজ ছিলো আর এখন তো সেই সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে।  

ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে খাইরুল বলেন, ফ্রিজ ভাড়ায় এতো সাড়া পড়বে তা কখনও বুঝিনি।  প্রথমে পরিচিতজনদের ফ্রিজ ভাড়া দিলেও এখন এর পরিধি বেড়েছে। অল্প কিছু টাকা জামানতের পাশপাশি ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও রঙিন ছবি রেখে ফ্রিজ ভাড়া দিচ্ছি এখন। নতুন ফ্রিজ হলে মাসিক ভাড়া ৬ শত, আর পুরোনো ফ্রিজের মাসিক ভাড়া ৫ শত টাকা।  ফ্রিজ ফেরত দেওয়ার সময় জামানতের টাকা দিয়ে দিই।

তার দোকানে এখন এসি, ফ্রিজ, প্রেসার কুকার, গ্যাসের চুলাসহ ইলেকট্রিক কিছু পণ্য মেরামত করা হয় বলে জানান তিনি।  

তিনি বলেন, এ কাজে আমার সঙ্গে আরও ৫ জন স্টাফ সহায়তা করেন। আমার পরিবারের পাশাপাশি তাদের সংসারেরও উপার্জনের রাস্তা এখন আমার এই ব্যবসা।

খাইরুল বলেন, মুদি ব্যবসা করার সময় এসি, ফ্রিজ, প্রেসার কুকার, গ্যাসের চুলা মেরামতের কোর্স করেছিলাম। ওই সময়ে দেখতাম, বিভিন্ন পরিবার থেকে পুরাতন ফ্রিজ বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি সেগুলো কিনে দোকানে এনে মেরামত করতাম।

তিনি বলেন, অনেকেই রয়েছেন যারা ৩০-৪০ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজ কিনতে পারেন না। আবার মেসের অনেক শিক্ষার্থীও রয়েছে, যাদের ফ্রিজের প্রয়োজন। কিন্তু স্বল্প সময়ের জন্য পড়াশুনা করতে এসে ফ্রিজ কিনতে চান না, তারাই এখন আমার ক্রেতা।

সবমিলিয়ে নতুন ফ্রিজের চেয়ে পুরাতন ফ্রিজের চাহিদা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, এ ব্যবসা দেশে আমিই প্রথম শুরু করছি। কিন্তু এখন যত মানুষ ফ্রিজ ভাড়া নিতে আসেন, তাদের দিতে পারি না অনেক সময়।

খাইরুলের দোকানের স্টাফ মোহাম্মদ সাহাব বলেন, ফ্রিজ ভাড়া দেওয়ার ব্যবসার তদারকি করতে গিয়ে হাতের কাজও শিখছি। তাই মামার এখানেই আমার রোজগারও বেড়েছে।

এলাকাবাসীও খাইরুলের এ ব্যবসাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।  

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম জাকির হোসেন বলেন, লোকসানে ভেঙে না পড়ে সততার মাধ্যমে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাই পারে না। খাইরুলের মতো মানুষ সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।