নড়াইল: হত্যার পর লাশ যেন শনাক্ত না হয় সেজন্য এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখের (১৭) ব্যাটারির এসিড মাথার মাংস গলিয়ে দেন সবুর শেখ।
আদালতে এভাবেই এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন প্রেমিকার বাবা সবুর।
গত ৬ মে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার আগের রাতে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামে খুন হন সিরাজ।
নিখোঁজের ৫দিন পর ১০ মে বিকেলে ওই ইউনিয়নের শওকত হোসেন মিরুর আমবাগান থেকে সিরাজ শেখের (১৭) বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধারের ১৫ ঘণ্টা মধ্যে পুলিশ হত্যারহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়। নৃশংস এ হত্যায় ব্যবহৃত গরু জবাইয়ের ছুরি ও রক্তমাখা কোদালের হাতলও উদ্ধার করা হয়।
মরদেহ উদ্ধারের পর নিহতের বাবা ১২ মে শুক্রবার গভীর রাতে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করে লোহাগড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সিরাজের হত্যাকারী তার প্রেমিকার বাবা সবুর শেখসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামের সবুর শেখ (৫২), সবুর শেখের স্ত্রী শাহিনা বেগম (৪৭), ছেলে জাহিদুল শেখ (২০), ও সিরাজ শেখের প্রেমিকা ইয়াসমিন খানম (১৬)। তারা সবাই একই পরিবারে সদস্য।
নিহত সিরাজ শেখ ওই ইউনিয়নের চর দৌলতপুর গ্রামের কৃষক শেখ ইকরাম আলীর ছোট ছেলে। তিনি চর দৌলতপুর সরস্বতী একাডেমি বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
জানা যায়, সিরাজের সঙ্গে একই গ্রামের মাদরাসাছাত্রী ইয়াসমিনের দুই মাস ধরে প্রেম চলছিল। মূলত প্রেমিকার ডাকে সাড়া দিয়ে দেখা করতে ৬ মে রাতে সিরাজ গিয়েছিলেন লোহাগড়া উপজেলার চর দৌলতপুর গ্রামে।
শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যায় আদালতে সবুর শেখ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মামলা দায়েরের ১৫ ঘণ্টার মধ্যে লোহাগড়া থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম হত্যারহস্য উন্মোচন করেন। গ্রেপ্তার চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে ম্যাজিস্ট্রের সামনে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেন সবুর শেখ।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার আগের রাতে (আনুমানিক রাত ১০ টার দিকে) প্রেমিকা ইয়াসমিনের ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে দেখা করতে যান এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ। এসময় বাড়ির পেছনে ইয়াসমিনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে সিরাজ শেখকে ধাওয়া করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ। সিরাজ দৌড়ে পালনোর সময় মেহগনি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। তখন কোদালের হাতল দিয়ে সিরাজের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ।
সিরাজ এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মারা গেছে ভেবে তার নিথর দেহ সবুর শেখ ঘাড়ে করে বাড়ির পাশে পুকুরের কচুরিপানার নিচে ঢেকে রাখেন ঘটনার ওই রাতেই।
পরে বাড়ি আসার পরও সবুরের সন্দেহ হয় বেঁচে আছেন কিনা? কিছুক্ষণ পর গরু জবাই করা ছুরি নিয়ে আবার সেখানে গিয়ে সিরাজের নিথর দেহ কচুরিপানার নিচ থেকে বের করে মৃত্যু নিশ্চিত করতে জবাই করেন সবুর।
পরের দিন (৭ মে) গভীর রাতে ঘরে থাকা ব্যাটারির এসিড (তরল দাহ্য পদার্থ্য) নিয়ে সিরাজের মরদেহ পুকুর থেকে উঠিয়ে বিলের মধ্যে দিয়ে ২ কিলোমিটার দূরে শওকত হোসেন মিরুর আমবাগানে নিয়ে যান।
লাশটি যেন শনাক্ত না হয় সেজন্য মরদেহ আমবাগানে ফেলে ব্যাটারির এসিড সিরাজের মাথায় ঢেলে মাথার মাংস গলিয়ে দেন সবুর শেখ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এসএএইচ