ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাঁশের তৈরি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল বগুড়ার হাজারো পরিবার

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
বাঁশের তৈরি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল বগুড়ার হাজারো পরিবার

বগুড়া: বগুড়ার ১২টি উপজেলায় বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন অভাবী, অসহায় পরিবারের হাজারো শ্রমজীবী নারী-পুরুষ।

শনিবার (১৩ মে) দুপুরে শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পরিশ্রমী ওই সব নারী-পুরুষ বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন।

দিনের সিংহভাগ সময়ই কাটে তাদের বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরপুর উপজেলার চকসাদী, মাঝিপাড়া, জোঁড়গাছা, তালপট্টি, সীমাবাড়ী, বিনোদপুর, কাশিয়াবালা, সুঘাট, শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম, কামারপাড়া, গাবতলী উপজেলার নিশোপাড়া, ধুনট উপজেলার পাকুড়িহাটা, নলডাঙা, সোনাহাটা, বাঁশহাটা, কান্তনগর, আদমদীঘি উপজেলার সান্দিরা ‘বাঁশ শিল্পখ্যাত গ্রাম’ বলেই সর্বাধিক পরিচিত। এসব গ্রামে হাজারো নারী-পুরুষ বাঁশ-শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বাঁশই তাদের জীবিকার আশ্রয় এবং বাঁশেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমজীবী মানুষেরা। তাদের কেউ কেউ দা দিয়ে বাঁশ কাটছেন। আবার কেউবা ‘বেতি’ তৈরি করছেন রকমারি পণ্য তৈরির জন্য। গ্রামে গ্রামে বাঁশ নিয়ে চলছে নারী-পুরুষের কর্মযজ্ঞ। নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা তাদের এ শিল্পকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।  

শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম হিন্দুপাড়া এলাকার সুরেশ চন্দ্র দাস, রমেস চন্দ্র দাস, গোপী চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে জানান, তাদের গ্রামে প্রায় ৮০টি পারিবার রয়েছে যারা বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাদের জমিজমা নেই বললেই চলে। সহায় সম্পদও তেমন একটা নেই। আছে মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁই।

তারা বলেন, বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রী জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা শহরের ব্যাবসায়ীরা কিনে স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। বাঁশ শিল্পের এ পেশার সঙ্গে বংশ পরম্পরা ধরে জড়িত তারাসহ তাদের সন্তানরা। জীবিকা নির্বাহে এটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলার অঞ্জলী চন্দ্র দাস, ললিতা চন্দ্র দাস, সচিরানী বাংলানিউজকে জানান, বাঁশের তৈরি পণ্য চাটাই, ধারাই, ডালা, ঝুড়ি, কড়পা, দারকিসহ বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী বানিয়ে থাকেন তারা। এ সব সামগ্রী বুনোনের সিংহভাগ কাজ তারা নারীরাই করে থাকেন। অন্যসব প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগাড় ও প্রস্তুতির কাজে যোগ দেন বাড়ির পুরুষরা। কিশোর-কিশোরীরাও এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করেন।

তারা বলেন, তাদের ছেলে-মেয়েদের অনেকেই স্কুলে লেখাপড়া করেন। আবার স্কুলে যাওয়ার বয়স হলেও অনেককে অর্থাভাবে পড়াশোনা করাতে পারছেন না। তবে নতুন প্রজন্মরা এ পেশা থেকে বেরিয়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন।  

বাঁশশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় নানান সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঁশের দামও বেড়েছে। প্রতিটি  বাঁশ কখনো ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কিনতে হয় তাদের। হাট-বাজার থেকে বাঁশ কিনলে দিতে হয় চাঁদা। এতে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। বাঁশ পণ্যগুলোর মধ্যে বাজারে চাটাই বিক্রি হয় পিস প্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, ঘরের ধারাই (সিলিং) স্কয়ার ফিট প্রতি ৬০-৮০ টাকায়। তবে এ পেশাটিকে ধরে রাখতে তাদের ব্যাংক ঋণ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
কেইউএ/ এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।