ঢাকা, বুধবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

`ঠিকভাবে গাড়ি চালানো না শিখে লাইসেন্স পাওয়া বন্দুকের চেয়েও ভয়ঙ্কর'

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩
`ঠিকভাবে গাড়ি চালানো না শিখে লাইসেন্স পাওয়া বন্দুকের চেয়েও ভয়ঙ্কর'

ঢাকা: যথাযথভাবে গাড়ি চালানো না শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া বা পাওয়া বন্দুকের গুলির চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে মন্তব্য করেছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সোমবার (১৫ মে) ‘বাংলাদেশে ৭ম জাতিসংঘ বৈশ্বিক নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ- ২০২৩’ পালন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ১০টি সংগঠনের জোট ‘রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ’।

গাড়ি চালানো না শিখে বিআরটিএ থেকে অবৈধ উপায়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার আগে বিআরটিএর যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার, সেটা যথাযথভাবে করা হয় না। আমাদের দেশে ক্ষমতাধররা ফোনে বিআরটিএকে বলে দেয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে দেওয়ার জন্য। এই সিস্টেম পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। আমরা চাই চালকরা যথাযথভাবে গাড়ি চালানো শিখে, যথাযথভাবে পরীক্ষা দিয়ে তারপর যেন ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে পারে।

তিনি বলেন, যথাযথভাবে গাড়ি চালানো না শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া বা পাওয়া বন্দুকের গুলির থেকেও ভয়ঙ্কর। কারণ বন্দুকের গুলি দিয়ে একজন একজন করে মারতে হয়। একসঙ্গে ১০ জনকে মারা যায় না। কিন্তু একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৫০ জন মারা যেতে পারে। এখানে আশঙ্কাজনক কোনটা? তাহলে কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হলে কতকিছু দেখা দরকার? আমাদের নীতি নির্ধারকদের এটা আবার ভাবা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি কারণ ২০১৮ সালে যে আইন তৈরি করা হয়েছে, সেখানে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের দেওয়া অনেক প্রস্তাবনা রাখা হয়নি। আমরা ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা’ নাম দিয়ে আইনটি করতে বলেছিলাম। কিন্তু আইনে শুধু ‘সড়ক পরিবহন’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে, নিরাপত্তার বিষয়টি রাখা হয়নি। আইনের নামের মধ্যেই যদি নিরাপত্তার শব্দটি না থাকে, তাহলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা কীভাবে হবে? নিরাপত্তার ব্যবস্থা যদি করতে হয়, তাহলে জাতিসংঘের দেওয়া পাঁচটি ব্যবস্থাপনা (নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ ব্যবহারকারী ও দুর্ঘটনা পরবর্তী চিকিৎসা) আমাদের আইনের মধ্যে থাকতে হবে। যে কারণে আমরা সড়কে মানুষের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক গড়তে আমরা কাজ করছি। কিন্তু তারপরও সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না। এটি করতে হলে আমাদের সবার সমন্বিতভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ও নিরাপদ সড়ক গড়তে পৃথক আইনি কাঠামো তৈরিসহ ৩ দাবি জানায় ‘রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ’।

দাবিগুলো হলো-

* সড়কে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে পৃথক আইনি কাঠামো তৈরি। যেখানে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক তৈরি, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও দুর্ঘটনা পরবর্তী চিকিৎসাকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।

* ন্যাশনাল রোড সেফটি অথোরিটি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন।

* সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সঠিক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের একটি বৈজ্ঞানিক ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া।

রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জোটের সদস্য সংস্থা নিসচার চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোড সেফটির প্রকল্প পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঞা, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনএনআরসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এস বজলুর রহমান, সিআইপিআরবির আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিটের রোড সেফটি প্রকল্প ম্যানেজার কাজী বোরহান উদ্দিন, নিসচার মহাসচিব লিটন এরশাদ, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হক কামাল প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী রোড সেইফটি সপ্তাহ পালন করে থাকে৷ চলতি বছর ১৫-২১ মে পর্যন্ত সপ্তমবারের মতো এই রোড সেইফটি সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে টেকসই যাতায়াত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।