ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ছেলে-মেয়ে সঙ্গে নেই, ভ্যানটিও গেল হালিমের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
ছেলে-মেয়ে সঙ্গে নেই, ভ্যানটিও গেল হালিমের

মাদারীপুর: সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের চাপাতলী এলাকার বাসিন্দা হালিম মাতুব্বর। আশি বছর বয়সী এ বৃদ্ধের ছেলে মেয়েরা তার সঙ্গে থাকেন না।

আলাদা সংসার তাদের। স্ত্রীকে নিয়ে হালিম একাই বসবাস করেন। তার অর্থ আয়ের একমাত্র সম্বল ছিল একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান। কিন্তু এক যুবকের বদ কাণ্ডে সেটি হারিয়েছেন প্রৌঢ়।  

বেঁচে থাকার যুদ্ধের একমাত্র ঢাল হারিয়ে হালিম এখন দিশেহারা। চিন্তা করছেন, কীভাবে আয় করবেন, কীভাবে স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দেবেন। গত শনিবার (২০ মে) হালিমের সঙ্গে অঘটনটি ঘটে। কয়েকদিন অপেক্ষার পর গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকেলে মাদারীপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

হালিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সকালে মস্তফাপুর থেকে যাত্রী নিয়ে শহরে আসেন তিনি। যাত্রীদের নামিয়ে শহরের বাঁশতলা বাচ্চু সড়কের দিকে গেলে আটকা পড়েন যানজটে। এ সময় এক যুবক তাকে ‘সাহায্য’ করতে এগিয়ে আসেন। যানজট থেকে তিনি ভ্যানটি সরিয়ে দেবেন বলে জানান।  

এক চোখে না দেখা ও ক্লান্তির কারণে হালিম রাজি হন। ওই যুবকের হাতে ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি তুলে দেন। কিন্তু ওই যুবক কৌশলে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যান। এ অবস্থায় হালিম শহরসহ বিভিন্নস্থানে নিজের ভ্যানটি খুঁজে ফিরেছেন।

হালিম মাতুব্বরের ৪ ছেলে, মেয়ে একটি। ছেলেরা আলাদা থাকে। মেয়ে স্বামীর বাড়ি। তারা খুব একটা বাবা-মাকে দেখেন না। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হালিম মাতুব্বর তাই ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি চালিয়ে উপার্জন করতেন। শারীরিকভাবে দুর্বল ও এক চোখে দেখতে না পাওয়ার পরও স্ত্রী ও নিজের খাবার-ওষুধের যোগান দিতে তিনি ভ্যান চালাতেন।  

ভ্যান হারিয়ে গত ৬ দিন ধরে দিশেহারা হালিম। কেঁদে চলেছেন এ কটা দিন। জানতে চাইলে হালিম বলেন, ৪০ হাজার টাকা ঋণ লইয়া ভ্যানডা কিনসিলাম। সপ্তাহ গেলেই কিস্তি দেওন লাগে। আমি অহন বাচুম (বাঁচব) কেমনে?

হালিমের প্রতিবেশী ও গ্রামের স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ চাইলেই বাচ্চু সড়কের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ভ্যান চোরকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশের সহায়তা চান তারা।  

এসব তথ্য নিশ্চিত করে মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন খান বলেছেন, তিনি তার সাধ্যমতো হালিম মাতুব্বরকে সহায়তা করবেন।  

হালিমের অভিযোগের ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, আমরা ভ্যানটি উদ্ধারের চেষ্টা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৩
এসএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।