ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমিউনিটি সলিউশন প্রোগ্রামে’ বিশ্বের ৯৫টি দেশের ৭ হাজার ৮৯২টি সংগঠনের কার্যক্রমের মধ্যে প্রথম ৪শতে স্থান পেয়েছে কুষ্টিয়ার সামাজিক সংগঠন ও লাইব্রেরি কৃষকের বাতিঘর।
সম্প্রতি কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে সংস্থাটি এই ফলাফল জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) কৃষকের বাতিঘর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। কমিউনিটি সলিউশন প্রোগ্রামটি বিভিন্ন দেশের ইয়ুথ লিডারশিপ ও তাদের সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিউনিটি সলিউশন প্রোগ্রাম হলো বিশ্বব্যাপী সেরা সামাজিক কার্যক্রমের নেতাদের জন্য একটি পেশাদার নেতৃত্ব বিকাশের প্লাটফর্ম। এই প্রোগ্রামের কাজ হলো- বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা এবং এর উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের উন্নত নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এই প্রোগ্রামের ফেলোরা একটি কমিউনিটি অ্যাকশন প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের নতুন দক্ষতা প্রয়োগ করে সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এটি বাস্তবায়নে কাজ করে মার্কিন সরকারের ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট এবং বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও শিক্ষা সংস্থা আইআরইএক্স।
এ বিষয়ে কৃষকের বাতিঘরের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বলেন, আমেরিকার কমিউনিটি সলিউশন প্রোগ্রাম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এবং অত্যন্ত সম্মানজনক একটি কার্যক্রম। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে- বিশ্বের ৯৫টি দেশের প্রায় ৮ হাজার সামাজিক সংগঠনের মধ্যে আমাদের কৃষকের বাতিঘর এই তালিকার প্রথম ৪০০ এর মধ্যে স্থান পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। আর এই প্রাপ্তি এটাই প্রমাণ করে যে, আমরা আমাদের সমাজের উন্নয়নে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অবদান রেখে চলেছি।
তিনি বলেন, এই কার্যক্রমে অংশ নিতে আমাদের কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রম সম্পর্কে আবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। আমাদের কার্যক্রম নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের ব্যাখ্যামূলক উত্তর দিতে হয়েছে প্রমাণসহ। এরপর সেগুলো তারা যাচাই বাছাই করে এবং আমাদের ইন্টারভিউ গ্রহণ করে। এরপর ৯৫টি দেশ থেকে পাওয়া ৭ হাজার ৮৯২টি সংগঠনের সবগুলো আবেদন বাছাই শেষে সম্প্রতি তারা ফলাফল ঘোষণা করে। যেখানে আমাদের সংগঠন ‘কৃষকের বাতিঘর’ প্রথম ৪০০ এর মধ্যে রয়েছে।
হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বলেন, কমিউনিটি সলিউশন প্রোগ্রামের তালিকার প্রথম ১০০টি সংগঠনকে বিশেষভাবে সম্মান জানানো হয়। বিশ্বের বড় বড় এবং দীর্ঘদিনের পুরোনো সংগঠনগুলোও এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে আবেদন জমা দেয়। সেদিক থেকে কৃষকের বাতিঘর কার্যক্রম শুরু করে ২০২১ সালে। সংগঠনটি তার কাজের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই তালিকার প্রথম ৪০০ তে স্থান করে নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তির পেছনে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আগামীতে আমরা আরও ভালো পর্যায়ে পৌঁছাবো এবং আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারবো।
এমন অবস্থানের জন্য কৃষকের বাতিঘরকে অভিনন্দন জানিয়ে আইআরইএক্স এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার কেট উলড্রিজ জানিয়েছেন, এই বৃহৎ সংখ্যক আবেদনকারীদের মধ্যে একজন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক আবেদনকারী হওয়ার জন্য আমরা কৃষকের বাতিঘরকে অভিনন্দন জানাই। এই সারির প্রথম ৪শতে অবস্থান তৈরি করা সত্যিই কঠোর পরিশ্রম এবং সমাজের উন্নয়ন কার্যক্রমের একটি বড় প্রমাণ।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামে ‘কৃষকের বাতিঘর’ লাইব্রেরি ও সংগঠনটি কাজ করছে কৃষকদের সহায়তায়। স্থানীয় একদল তরুণ-তরুণীর এই স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন কৃষকদের আধুনিক কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রকৃতি সচেতন হয়ে চাষাবাদের জন্য সহায়তার পাশাপাশি তাদের মধ্যে শিক্ষা-সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এছাড়া প্রথাগত লাইব্রেরি বা পাঠাগারের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এই তরুণ-তরুণীরা। সাজানো-গোছানো বইয়ের তাক, চুপচাপ পরিবেশ আর নিঃশব্দে বই পড়া কিংবা চাইলে কোনো বই খাতায় এন্ট্রি করে বাড়িতে নিয়ে বই পড়ার সাধারণ ব্যবস্থার পাশাপাশি এই পাঠাগার ও সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরাই চলে যান কৃষকের কাছে। কখনো বাড়ির আঙিনায়, কখনো ফসলের মাঠে বসেই স্বেচ্ছাসেবীরা বই পড়ে শোনান নিরক্ষর কৃষকদের। সহজপাঠের পাশাপাশি চলে নানা বিষয়ে কথকতা আর আড্ডা। যে গ্রামীণ সমাজ থেকে লেখাপড়া শিখে এই তরুণ-তরুণীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছে, তারাই এখন সে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে; যা ইতোমধ্যেই সমাজের সব স্তরে সমাদৃত হয়েছে বিশেষভাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
এইচএমএস/আরএ