ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংকটে নিম্নবিত্ত, কর্মঘণ্টা নষ্টেও মিলছে না ওএমএস-টিসিবি পণ্য!

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৪ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৩
সংকটে নিম্নবিত্ত, কর্মঘণ্টা নষ্টেও মিলছে না ওএমএস-টিসিবি পণ্য!

ঢাকা: মহামারি করোনার ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবন চরম সংকটে পড়ে। সেই ধাক্কা কিছুটা সামাল দিয়ে উঠতে না উঠতেই গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় মানুষের জীবনে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে।

দ্রব্যমূল্যে দাম বেড়ে যাওয়ায় ১ কোটি নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে সরকার ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দিচ্ছে। শুধু তাই নয় রাজধানীতে ওএমএস কমমূল্যে চাল ও আটা বিতরণ করলেও চাহিদার তুলনায় পরিমাণ কমে যাওয়ায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছেন না সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো। সমাজের এসব মানুষরা জানিয়েছেন দুটি টাকা কমের কারণে সকাল থেকে লাইনে থেকেও পণ্য না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।

জরুরি নিত্যপণ্য চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা-ময়দা, দুধসহ সকল পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে জীবন চালাতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের। কম দামে পণ্য নিতে নিম্নবিত্তরা ছুটে বেড়াচ্ছেন এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়। লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভও দেখা গেছে।

আসিয়া আক্তার মানুষের বাসার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত দুইদিন ধরে মিরপুরের শেওড়া পাড়া এলাকায় সারাদিন ঘুরে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী রিকশা চালায় এবং আমি মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করি। দুজনের আয়ে সংসার চলে, আজ দুদিন বাসাবাড়িতে কাজে না গিয়ে টিসিবি পণ্য নিবো বলে লাইনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদে দাঁড়িয়ে পণ্য না নিয়ে ফিরে আসি এবং বিকালে আবারো পণ্য আনতে যাই রাত অবধি লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কিনতে পারিনি। পরের দিন আরেক এলাকায় গিয়েও ফিরে আসি এভাবে দুই দিন কাজে না গিয়ে উভয় দিকে ক্ষতি হলো বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ভোক্তাদের সুবিধার্থে সরকার থেকে ডিলারের সংখ্যা বাড়ানোর কারণে মানুষের কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে একদিন একটি এলাকায় একই সময়ে পণ্য আসলে এই দুর্ভোগ কমে যাবে বলে তারা মনে করেন।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুরের একজন টিসিবি ডিলার বাংলানিউজকে বলেন,  আগে আমরা এক থেকে দেড় হাজার প্যাকেজ পেতাম। এখন ডিলার বেড়েছে, আমরা ৩২০ জনের প্যাকেজ পাই। আমরা পুরাতন ডিলার হওয়ার মানুষ আমাদের এখানে ভিড় করছে, নতুনদের ঠিকানা এখনও মানুষ অনেকে জানে না। মানুষের সুবিধার জন্য ডিলার বাড়িয়েছে সরকার তবে একই সময় একটি ওয়ার্ডে পণ্য বিতরণ শুরু করা গেলে এই সমস্যা কমে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।

কম দামে চাল নিতে এসে ওএমএস ট্রাকের অপেক্ষায় কয়েক ঘণ্টা আগেই মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মেট্রোরেল স্টেশনের পাশে এসে অপেক্ষা করছেন বৃদ্ধা নূরজাহান বেগম। । ট্রাক থেকে পণ্য নিবেন, পণ্যবাহী ট্রাক আসার দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পণ্য নিতে না পেরে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে মেট্রোরেলের সিঁড়ির নিচে গিয়ে অবস্থান নেন তিনি।
 
এ সময় বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পরিবারে স্বামীর উপার্জনে সংসার চলে না, আমি নিজেও টিউশনি করি। কিন্তু যে দিন পণ্য দেয় সেই দিন আর আমার টিউশনিতে যাওয়া হয়না। দিন চলে যায় পণ্য নিতে। অনেক সময় পণ্য না পেয়েও ফিরে যেতে হয় চাল-আটার যে দাম এতে করে সংসার চলে না। তাই এখানে সকালে এসে অপেক্ষায় থাকি কখন ট্রাক আসবে, কখন পণ্য পাবো। পরিবার নিয়ে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতেই আমাদের এই অপেক্ষা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বামীর একার আয়ে সংসার চলছে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছি বলে জানালেন গৃহিণী রাবেয়া বেগম। তবে দীর্ঘ লাইন ও অতিরিক্ত গরমে অসুস্থবোধ করছি। জানিনা আদৌও পণ্য নিতে পারবো কিনা।

এব্যাপারে মিরপুরের ওএমএস ডিলার নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চাহিদার তুলনার পণ্য কম পাওয়ার কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আগে যে পণ্য পেতাম তাতে (জন প্রতি চাল ৩ কেজি ও আটা ৫ কেজি) মোট ৪০০ জনকে পণ্য দিতে পারতাম, এখন একই পরিমাণ পণ্য দেই তবে সরকার থেকে পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় ২০০ জনকে পণ্য দিতে পারি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

চাল, ডাল, তেল, মরিচের দামও এখন আকাশচুম্বী। ফলে নিত্যদিনের বাজার খরচ মেটাতে দিশাহারা নিম্নমধ্যবিত্তরা। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না কিছুতেই। জীবন চালাতে ধার-কর্য করছে প্রতিনিয়ত। এতে করে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্নবিত্তদের।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সকল পণ্যের উপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। যার ফলে পণ্যের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় সব মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে জীবন চালাতে। সংসার চালাতে না পেরে অনেকেই ঢাকা ছেড়েছেন। তাই নিত্যপণ্যের লাগাম টেনে না ধরতে পারলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবন চরম সংকটে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩
এসএমএকে/ এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।