ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এবার ফরিদপুরে চুরির অপবাদে ২ শিশুকে মধ্যযুগীয় নির্যাতন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
এবার ফরিদপুরে চুরির অপবাদে ২ শিশুকে মধ্যযুগীয় নির্যাতন!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় টিউবওয়েল চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চাপলডাঙ্গা গ্রামে।

এদিকে ওই ঘটনার একটি ভিডিও বুধবার (৭ জুন) দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত ভাইরাল হয়। শিশু নির্যাতনের দায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের ভাই নজরুল শেখ নামে একজনকে পুলিশ আটক করে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে ফরিদপুর আদালতে পাঠিয়েছে।  

জানা যায়, উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখের বড় ভাই নজরুল শেখের একটি টিউবয়েল সম্প্রতি চুরি হয়। এ ঘটনার জের ধরে ইউপি সদস্য মো. নাজমুল শেখ (৩৯), তার ভাই নজরুল শেখ (৪৩) ও একই গ্রামের হাসান খন্দকার (৩৫) নামে তিন ব্যক্তি স্যালোমেশিনের টিউবওয়েল চুরির অপবাদে সুমন শেখ (৯) এবং সৌরভ আলী (১০) নামে দুই শিশুকে পায়ে শিকল বেঁধে গত মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে স্থানীয় নাজমুল মেম্বরের উত্যপ্ত ধানের চাতালে কাঠের বাটাম (মাটা লাঠি) ও বাঁশের লাঠি দিয়ে শুইয়ে বেধড়ক মারধর করেন। সুমন শেখ ওই ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের খাঁ পাড়া এলাকার দরিদ্র রিকশাচালক মিন্টু শেখের ছেলে। মিন্টু শেখ ঢাকায় রিকশা চালান। আর সুমন গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদির সঙ্গে থাকে।

আরেক শিশু সৌরভ আলী একই ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক আলীবর শেখের ছেলে। তবে নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না ভুক্তভোগী ওই পরিবার। এমনকি এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিতেও ভয় পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নির্যাতিত সুমন শেখের চাচা মিরাজ শেখ জানান, নাজমুল মেম্বারের ভাইয়ের স্যালোমেশিনের টিউবওয়েল চুরির ঘটনায় রাস্তা থেকে সুমন ও সৌরভকে ধরে নিয়ে দুপুরে তীব্র রোদে পায়ে শেকল বেঁধে গরম চাতালের মেঝেতে খালি গায়ে শুইয়ে রেখে নির্যাতন করেছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ভয়ে চুরির কথা স্বীকার করে ওই দুই শিশু। এ ঘটনার খবর পেয়ে আমার বাবা সিরাজ সেখ ও সৌরভের বাবা আলিবর শেখ গিয়ে শিশু দুটিকে নির্যাতনের কবল থেকে উদ্ধার করে। মেম্বারের ভাই প্রভাবশালী, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কিছু করা যাবে না। তাই থানায় জানাইনি।

ভুক্তভোগী সুমন শেখ জানায়, প্রতিবেশী একজনের সঙ্গে জাম বিক্রির জন্য বোয়ালমারী বাজারে যাচ্ছিলাম। তখন নাজমুল মেম্বারের ভাই নজরুল ভ্যান থেকে আমাকে নামিয়ে তাদের বাড়ির ধানের চাতালে নিয়ে পায়ে শিকল বেঁধে শুইয়ে রাখে। এ সময় আমার পায়ের তলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চালায় তারা। এক পর্যায়ে আমাদের দুই জনের গলায় ফাড়া বাঁশ দিয়ে চেপে ধরে রাখে। ভয়ে আমরা চুরির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হই।

এ বিষয়ে জানতে নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য মো. নাজমুল শেখের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপর নির্যাতনকারী চাপলডাঙ্গা গ্রামের আইয়ুব খন্দকারের ছেলে হাসান খন্দকারের বাড়িতে গিয়ে না পাওয়ায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি লাইন কেটে দেন।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেলে এ ব্যাপারে গুনবহা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম জানান, কিছুদিন ধরেই ওই এলাকার বাড়ি ও মাঠ থেকে টিউবয়েল চুরি হচ্ছে। গত দুই দিন আগে নাজমুল মেম্বরের ভাইয়ের একটি টিউবয়েল চুরি হয়। শুনেছি ওই ছেলে দুটিই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের কাছ থেকে টিউবয়েলের হাতল উদ্ধার করা হয়। মেম্বরের ভাই শিশু দুটিকে ধরে এনেছিল। পরবর্তীতে শিশুর অবিভাবকরা শাসন করে নিয়ে তাদের নিয়ে গেছে।

জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু কারো কোনো অভিযোগ না থাকায় মামলা হয়নি। শিশুদের অভিভাবকদের কোনো অভিযোগ না থাকায় ধর্তব্য অপরাধ সংগঠনের দায়ে আটক ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।