ঢাকা: পটুয়াখালীর দুমকিতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হালিমা আক্তার মিমের (২১) মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।
তবে সেখানে ভর্তি রয়েছে তার দুধের সন্তান ৬ মাস বয়সী জিসান।
নিহত হালিমার খালাতো ভাই মো. জুলহাজ হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে হালিমার স্বামী জামাল উদ্দিন বাসার বাইরে থাকায় হালিমার শাশুড়ি পিয়ারা বেগম এবং শ্বশুর জাফর মৃধাসহ কয়েকজন মিলে বাসায় ঢুকে হালিমার হাত-পা বেঁধে শিশু সন্তানসহ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর রুমের দরজায় তালা মেরে পালিয়ে যান। আগুনে হাত-পায়ের বাঁধন পুড়ে খুলে গেলে, সেখান থেকে বাইরে বের হন হালিমা।
এর আগেও তারা হালিমা ও তার সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করেন উল্লেখ করে নিহতের এই স্বজন আরও জানান, এর আগেও তারা হালিমার শিশু সন্তানকে ৪/৫ বার বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন। ঘটনাটি হালিমা তার স্বামীকে প্রথমে বিশ্বাস করাতে পারেনি। পরে একবার মোবাইল ফোনে হত্যা চেষ্টার ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে দেখায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সালিশ বৈঠক হয়। পরে তারা দুমকি হলপট্টি নতুন বাজার মুসলিম পাড়ায় ভাড়া বাসায় ওঠেন। ঘাতকরা বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সেখানে গিয়ে এই ঘটনা ঘটায়। ওই রাতেই দগ্ধ মা-ছেলেকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া হালিমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় নিহতের মামা ওমর ফারুক বাদী হয়ে শাশুড়ি পিয়ারা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে দুমকি থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৩) দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে নিহতের শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে (৫২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সংবাদ পেয়েছি, অগ্নিদগ্ধ নারী ঢাকায় চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। তারা একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় নিহতের শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুমকি সাতানী গ্রামের বাসিন্দা প্রিন্স ও হালিমা আক্তার দম্পতি গত ২ জুন শাহজাহান দারোগার ভাড়াটে বাসায় ওঠেন। বুধবার (৭ জুন) দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই যে যার বাসায় বিশ্রাম করছিল। হঠাৎ প্রতিবেশী নতুন ভাড়াটে বাসায় আর্তচিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকানি দেওয়া দেখতে পান। ভেতরে ঢুকে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ হালিমা আক্তারকে হাত পা-বাঁধা ও গড়াগড়িরত অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে শুক্রবার (৯ জুন) বিকেল ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন- গৃহবধূর হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে দরজা আটকে পালালো দুর্বৃত্তরা
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
এজেডএস/এনএস