মাদারীপুর: মাদারীপুরের যুবক শাহাবুল লিবিয়ায় মানব পাচারকারী মাফিয়াদের হাতে বন্দি। তবে এক বছর ধরে তার কোন খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারের লোকজন।
এদিকে সন্তানকে ফিরে পেতে স্থানীয় মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেও শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা পায়নি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সরাসরি ইতালি যাওয়ার জন্য ২০২২ সালের ১২ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার কুমড়াখালী গ্রামের এমদাদ বেপারী (৫০), আয়শা বেগম (৪০), লক্ষীগঞ্জ গ্রামের নাসির তালুকদার (৩৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৮), আল-আমিন হাওলাদার (৩৫) ও হাজরাপুর গ্রামের ফিরোজ হাওলাদারকে সর্বমোট ১৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। কথা থাকে বিমানে করে সরাসরি ইতালি পাঠাবে।
পরে ওই বছরেরই ২৫ মার্চ শাহাবুল মাতুব্বরকে মাদারীপুরের নয়াচর গ্রামের বাড়ি থেকে এই মানবপাচারকারী চক্র সরাসরি ইতালিতে না পাঠিয়ে লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে তুলে দেয়। পরে মাফিয়াদের হাতে বন্দী করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছেলেকে দিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ধারদেনা করে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে স্থানীয় মানব পাচারকারী আসামিদের কাছে দেওয়া হয়। তারপরও শাহাবুলকে মুক্তি দেয়নি।
পরিবারের সদস্যরা গত এক বছর ধরে শাহাবুলের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। কোনো খোঁজখবরও পাচ্ছেন না। এতে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন পরিবারের সদস্যরা।
এই ঘটনায় ছেলেকে ফিরে পেতে শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর গত ২৩ মে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা পুলিশ আদালতে মামলা দায়ের করতে পরামর্শ দেয়। পরে আদালতে একটি মামলা দায়ের করলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এই বিষয়ে মামলার বাদী নিখোঁজ শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর বলেন, ‘আমার ছেলেকে ইতালি নেবে বলে আমাদের কাছে থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে আরও ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেয়। তবুও আমার ছেলেকে ইতালি পৌঁছে দেয়নি কিংবা জীবিত আমাদের কাছে ফেরত দেয়নি। আমার ছেলে এখন বেঁচে আছে কি না সেটিও আমরা জানি না। এদিকে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেও পুলিশ এখনো প্রধান আসামি এমদাদ বেপারীসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ছেলেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের ছেলেকে ফেরত চাই। '
নিখোঁজ শাহাবুলের মামাতো ভাই মো. ইদ্রিস মোল্লা বলেন, ‘শাহাবুলকে ইতালি পাঠানোর বিষয়ে টাকা লেনদেনে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ইতালি নেওয়ার কথা বলে ওরা লিবিয়ায় নিয়ে আমার ভাইকে বন্দী করে রেখেছে। আমরা গত এক বছর ধরে তার কোন হসিদ পাচ্ছি না। আদালতে মামলা দায়ের করেও এই ঘটনার তেমন কোন সুরাহা পাচ্ছি না। থানা পুলিশের কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন অবিলম্বে মামলায় উল্লিখিত আসামিদের গ্রেপ্তার করে শাহাবুলকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করে দেয়।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এই মামলার প্রধান আসামি এমদাদ বেপারীকে আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে শাহাবুলের খোঁজ পাওয়া যাবে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এসএএইচ