দীর্ঘ সাড়ে ৩১ বছর কারাভোগের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) থেকে মুক্তি পেয়েছেন ২৬ ফাঁসির দড়ি টানা জল্লাদ শাজাহান। মূল ফটক থেকে তিনি যখন বের হচ্ছিলেন, তখন বিদায় জানাতে তার সঙ্গে ছিলেন কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীরা।
এসময় জল্লাদ শাজাহানের পরনে ছিল ধবধবে সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট। কোমরে ছিল কালো রঙের বেল্ট। হাতে ছিল কালো রঙের একটি কাপড়ের ব্যাগ।
রোববার (১৮ জুন) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মুক্তি পান জল্লাদ শাজাহান। কারাগার থেকে একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘ সময় কারাভোগের কারণে জল্লাদ শাজাহানের সঙ্গে অনেকেরই সম্পর্ক ভালো ছিল। সুশৃঙ্খলভাবে কারাগারে তিনি কাজ করেছেন। অনেক কর্মকর্তাই তাকে স্নেহ করতেন।
‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে।
৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ। মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, শাহজাহান ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। দুটি মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয়েছিল। পাশাপাশি সেসব মামলায় জরিমানা হয়েছিল পাঁচ হাজার করে ১০ হাজার টাকা।
কিন্তু কারাগারের মধ্যে ভালো কাজ এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তার সাজার মেয়াদ ১০ বছর মওকুফ (রেয়াত) করা হয়। পাশাপাশি শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ তার জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দেয়।
ফলে দীর্ঘ ৩১ বছর ছয় মাস দুই দিন কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি জীবন কাটানোর পর আজ তিনি মুক্ত হলেন।
কারাগারের তথ্য অনুযায়ী, ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টেনেছেন। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন ছয়জন, যুদ্ধাপরাধী ছিলেন চারজন, জেএমবি ছিলেন দুইজন ও অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামি ছিলেন ১৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এজেডএস/এমএইচএস