নড়াইল: নড়াইলের বিছালি ইউনিয়নের ভ্যানচালক দেলোয়ার গাজী (৫৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
আপন ভাইকে হত্যার দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি ইকরামুল গাজী।
এর আগে বুধবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে নিহতের ছোট ভাই ইকরামুল গাজীকে সদর উপজেলার মধুরগাতি এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
আটক ইকরামুল গাজী ওই গ্রামের মৃত শুকুর আলী গাজীর ছেলে।
পুলিশ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি সূত্রে জানা যায়, নিহত দেলোয়ার গাজীর স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো ইকরামুল গাজীর স্ত্রীর। বিষয়টি ইকরামুলের স্ত্রী তাকে জানালে প্রতিকার চেয়ে বড় ভাই দেলোয়ার গাজীর কাছে একাধিকবার নালিশ করেন ইকরামুল। কিন্তু এ বিষয়ে দেলোয়ার গাজী কোনো গুরুত্ব দেননি, এমনকি সান্ত্বনামূলক কোনো কথাও বলেননি ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইকরামুলের স্ত্রী রাগ করে তার বাবার বাড়ি চলে যান। ঘটনা সমাধান না হলে ইকরামুলের সংসারে আর আসবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তাই স্ত্রীকে খুশি করতে এবং তাকে ফিরিয়ে আনতেই ইকরামুল বিষয়টি নিয়ে তার বন্ধুর সঙ্গে মিলে ভাই দেলোয়ার গাজীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনামাফিক গত ২৯ মে আনুমানিক রাত ৯টার দিকে দেলোয়ার গাজীকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যান ইকরামুলের বন্ধু। এ সময় ইকরামুল ও তার অপর সহযোগী মিলে তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দেলোয়ার গাজীর ভ্যানে চড়ে আটঘরা গ্রাম থেকে নাউসোনা শ্মশানগামী রাস্তা দিয়ে আসতে থাকেন। পথে নূর মোহাম্মদ বিশ্বাসের মৎস্য ঘেরের নিকট আসার পর ইকরামুলের বন্ধু তার কাছে থাকা গামছা দিয়ে পেছন থেকে দেলোয়ার গাজীর গলা পেঁচিয়ে ধরেন। পরে দুইজন দুই দিক থেকে গামছা টেনে শ্বাসরোধ করে দেলোয়ার গাজীর মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মোড় অন্য দিকে প্রবাহিত করতেই, ঘটনার রাতে ইকরামুল ও তার বন্ধু পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরের অভয়নগর থানার বুনোরামনগর এলাকায় নিহত দেলোয়ার গাজীর ভ্যানটি রেখে পালিয়ে যান।
ইকরামুলের সহযোগীকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ২৯ মে বিকেলে নড়াইল সদরের বিছালি ইউনিয়নের মধুরগাতী গ্রামের মৃত শুকুর আলী গাজীর ছেলে ভ্যানচালক দেলোয়ার গাজী ওরফে দেলবার নিজের ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বিছালি পুলিশ ক্যাম্পে অভিযোগ করেন। পরের দিন ৩০ মে সকালে ইউনিয়নের আটঘরা গ্রামের নাউসোনা শ্মশানগামী কাঁচারাস্তা সংলগ্ন নূর মোহাম্মদ বিশ্বাসের মৎস্য ঘেরের পাড় থেকে নিখোঁজ দেলোয়ার গাজীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৩১ মে নিহতের আরেক ভাই গাজী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে নড়াইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: নড়াইলে রাস্তার পাশে পড়েছিল ভ্যানচালকের মরদেহ
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
এনএস