বরিশাল: হঠাৎ করেই বরিশাল নগরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিনের চাল কেটে চুরির ঘটনা ঘটছে। ঘটনাগুলো নিয়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী চোর ধরতে না পারায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, চুরির ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের কথাও বলেছেন তিনি।
নগরে টিনের চাল কেটে চুরির ঘটনা আলোচনায় আসে গত ১৯ মে। এদিন দিবাগত রাতে নগরের চৌমাথা এলাকায় মিতালী প্লাজা নামে একটি মার্কেটের নয়টি দোকানের টিনের চাল কেটে মালামাল চুরি করে নেয় একটি চোরচক্র। দোকানগুলোর মধ্যে দুটি কসমেটিক্সের, দুটি ভ্যারাইটিজ স্টোর, একটি ফার্মেসি, একটি বইয়ের দোকান, একটি সেলুন, একটি জুতার দোকান। এসব দোকান থেকে নগদ টাকা, মূল্যবান বহনযোগ্য ছোট আকারের মালামাল নিয়ে গেছে চোরেরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ১৯ মে রাতে সাড়ে ৯টার দিকে তারা দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরেন। গত ২০ মে সকালে দোকান খুলে দেখতে পান সব কিছু এলোমেলো। জিনিসপত্র-নগদ টাকা খোয়া। পরে টিনের চাল কাটা অবস্থায় দেখতে পান তারা। চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও আছে তাদের কাছে। ফুটেজে চোর সদস্যদের চেহারা স্পষ্ট। কিন্তু এলাকাবাসী তাদের চেনে না। তাদের দোকানগুলো থেকে লাখো অর্থ চুরি হয়েছে।
এ ঘটনার বিষয়ে মার্কেটের মালিক ও পুলিশকে জানানো হয়। কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ না জানালেও কেউ কেউ থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন। পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজও সরবরাহ করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে কাউকে আটক করতে পারলে জিডি মামলায় রূপান্তর হবে।
১৯ মের ঘটনাটির আগে ও পরেও নগরের সিএন্ডবি রোডের টিটিসি মসজিদ সংলগ্ন ফটোকপি, ফ্লেক্সিলোডের দুটি দোকান; সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন মেজর এম.এ.জলির সড়ক (করিম কুটির) সংলগ্ন একটি খাবারের দোকান, একটি ফার্মেসি, একটি ভ্যারাইটিজ স্টোর ও একটি বোরকা বিক্রির দোকানের টিনের চাল কেটে চুরি সংগঠিত হয়।
এ ছাড়া নগরের দক্ষিণ আলেকান্দার সিঅ্যান্ডবি রোডের খান সড়কের মুখে একসারিতে থাকা একাধিক ফার্মেসি, হার্ডওয়ারসহ ১১টি দোকানের টিনের চাল কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে স্থানীয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের টিনের চালও কাটে চোরচক্র। অপরদিকে সিঅ্যান্ডবি রোডের সাগরদী এলাকার সিকদার পাড়া সড়কের মুখে আটটি দোকানে একই কায়দায় চুরি হয়।
এসব ঘটনায় প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে একজন করে ব্যবসায়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পুলিশকে জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমনটি চলতে থাকলে আমরা আরও বড় সমস্যার মুখে পড়বো। সাধারণত ঈদ এলে আমাদের বেচা-বিক্রি কিছুটা ভালো হয়। এমন চুরির ঘটনা আমাদের জন্য ব্যাপক ক্ষতি কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা এ ঘটনায় আতঙ্কিত।
পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে চোরদের চেহারা স্পষ্ট। চোরের মুখে ছোট টর্চলাইটও দেখা গেছে। প্রতিটি আলাদা আলাদা সিসিটিভি ফুটেজে এক ব্যক্তিকেই বেশিরভাগ দোকানে চুরি করতে দেখা গেছে। টিনের চাল কাটার ধরন ও চোরের শারীরিক গঠন বলছে, একটি চক্রই এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে। দ্রুত এ চক্রকে আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বিপিএম (বার) বলেন, একের পর এক চুরির ঘটনাগুলো গুরুত্ব নিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মাঠে থানার পাশাপাশি ডিবি পুলিশ কাজ করছে। আমরা দ্রুত চক্রটিকে আটকের চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এমএস/এমজে