ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদের আগে টানা বর্ষণ: সদরঘাটের লঞ্চগুলো যাত্রী খরায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
ঈদের আগে টানা বর্ষণ: সদরঘাটের লঞ্চগুলো যাত্রী খরায়

ঢাকা: রাত পোহালেই ঈদুল আজহা, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এতে বাধ সেধেছে আষাঢ়ের বৃষ্টি।

সকাল থেকে টানা বর্ষণে নৌপথকে নিরাপদ মনে না করে সড়ক পথেই বাড়ি যাচ্ছেন নগরবাসী। ফলে রাজধানীর একমাত্র নৌবন্দর সদরঘাটের লঞ্চগুলো যাত্রী খরায় ভুগছে।  এদিন সদরঘাট পল্টুনে যাত্রীদের তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। লঞ্চগুলো যাত্রীর অভাবে একটু লেট করে ছাড়ছে। বেশিরভাগ লঞ্চের কেবিন ও ডেক ফাঁকা পড়ে আছে। এজন্য এখন আর কোনো সময়সূচি মেনে লঞ্চ ছাড়ছে না। যাত্রী পূর্ণ হয়ে গেলেই লঞ্চ ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে অনেকটা স্বস্তিতেই রাজধানী ছাড়ছে সাধারণ মানুষ।

বুধবার (২৮ জুন) সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে টানা বর্ষণে টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়নি। তবে দুপুরের পর থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে থাকেলেও সেটি অন্যান্যবারের ঈদের তুলনায় খুবই কম। কেননা ঈদের আগের দিন টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়ে টার্মিনালে পা রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। আজ সে জায়গা অনেকটা ফাঁকাই। ফলে যাত্রীরা দুর্ভোগ ছাড়াই লঞ্চে উঠতে পারছেন। বিভিন্ন লঞ্চের স্টাফদের হাকডাকে মুখর ছিল পন্টুন। আজ যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ না থাকায় টার্মিনালে চলাচলে তেমন কোনো কষ্ট হয়নি। নির্বিঘ্নেই টার্মিনালে ও লঞ্চে যাত্রীরা ঘুরাফেরা করতে পারছে। তবে ভোলা পটুয়াখালী রুটে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও চাঁদপুর, বরিশাল লাইনে ভিড় কম দেখা গেছে।  

এদিকে মঙ্গলবার (২৭ জুন) সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের অতিরিক্ত চাপ থাকায় গুলিস্থান, রায়সাহেব বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় তীব্র যানজটের কাবলে পড়তে হয়েছে যাত্রী সাধারণের। কিন্তু আজ সেখানে তেমন কোনো দুর্ভোগও পোহাতে হয়নি সাধারণ যাত্রীদের। এসব এলাকা ফাঁকা থাকায় নির্বিঘ্নে যাত্রীরা গাড়ি কিংবা হেঁটে চলে আসতে পেড়েছে।  
 
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা ও লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আজকে সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় লঞ্চে যাত্রী অর্ধেকে নেমে এসেছে। বৃষ্টির জন্য নৌপথকে অনেকে নিরাপদ মনে না করায় সড়ক পথে চলে যাচ্ছে। আবার অনেকেই বৃষ্টির জন্য বাসা থেকে দেরিতে বের হচ্ছে। তারা এখনও টার্মিনালে এসে পৌঁছায় নি। আশা করছি সন্ধ্যার পর যাত্রীদের চাপ কিছুটা বাড়বে। এছাড়া পদ্মা সেতু হওয়ার পর লঞ্চের যাত্রী ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

এম ভি তাসরিফ লঞ্চের সহকারী ইনচার্জ মো. শিমুল বাংলানিউজকে বলেন, আজকে যাত্রী নেই বললেই চলে। আমাদের অর্ধেক কেবিন খালি পড়ে আছে। ডেকও অনেক ফাঁকা। বৃষ্টির জন্য এটি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ঝড় বৃষ্টি এড়াতে সড়ক পথ বেছে নিচ্ছে। মঙ্গলবার ২ থেকে আড়াই হাজার যাত্রী নিয়ে বেতুয়া গিয়েছি৷  আজকে দুপুরে লঞ্চ ঘাটে লাগিয়েছি। সাড়ে ৭টায় ছাড়া কথা, মনে হচ্ছে ৮টা বাজবে। কারণ যাত্রী না হলে লোকসানে পড়তে হবে।

এমভি ফারহান -৬ এর সুপারভাইজার মো. কবির হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, আজকে বিকেলের প্রত্যেকটা লঞ্চ যাত্রী খরায় আছে। ঈদের আগের দিন এমনটা কখনো হয় না। এদিন যাত্রীদের চাপ সামলাতে আমরা হিমশিম খাই। আজ সেখানে ফাঁকা। টানা বৃষ্টির জন্য এটি হয়েছে।  

গ্লোরী অব শ্রীনগর -৮ এর কেবিন ইনচার্জ মো. সুমন বাংলানিউজকে বলেন, আজকে যাত্রী কম। আমাদের লঞ্চ ভরে গেলেই ছেড়ে দেবো। এই মুহূর্তে ৮৩টি কেবিনের মধ্যে ৫০টির মতো বুক হয়ে গেছে। ডেক ও প্রায় ভরে গেছে। আশা করছি ৭টার মধ্যে সব ভরে গেলে লালমোহনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।  

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে বরগুণার সোহেল রহমান৷ তিনি বলেন, বৃষ্টির জন্য আসতে দেরি হয়েছে। যে লঞ্চের টিকিট বুকিং দিয়েছিলাম সেটি কিছুক্ষণ আগে ছেড়ে চলে গেছে৷ এখন অন্য লঞ্চ আসলে সেটিতে বাড়ি যাবো। বৃষ্টির জন্য একটু বেগ পেতো হলো আর কি। তারপরও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারবো সেটি ভেবেই আনন্দ লাগছে।  

এমভি ফারহান -৬ লঞ্চের যাত্রীতে শাহিন খান বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। আজ থেকে ছুটি পাইছি। ভাবছিলাম সকালের লঞ্চে চলে যাবো কিন্তু বৃষ্টির জন্য বাসা থেকে বের হতে পারিনি। এরপর ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছি। দুই একটি জায়গা ছাড়া কোথাও জ্যাম পাইনি। তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। লঞ্চে উঠে পোশাক চেইঞ্জ করবো৷ যাইহোক লঞ্চ যে ছাড়ছে এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।  যে বৈরি আবহাওয়া আমিতো ভয়ে ছিলাম লঞ্চ না বন্ধ করে দেয়।  

বিআইডব্লিউটিএ এর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আজকে সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ কম৷ লঞ্চগুলো মোটামুটি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। যেটি ঈদের আগের দিন কাম্য নয়। এদিন যাত্রীদের চাপে টার্মিনালের দারে কাছে যাওয়া যায় না। আজ বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ৪৫টি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ৭৬ টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। ঢাকায় এসেছে ৮০টি লঞ্চ। চাঁদপুর, বরিশাল,লালমোহন, বেতুয়া, মৃদ্ধারহাট, মুলাদি, বরগুনা, ভোলা, শৈলা ও শরিয়তপুরসহ ৪৩টি রুটে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এছাড়া সোমবার ৯৮টি, মঙ্গলবার ১৩৩টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে এবং বুধবার ১০০টির মতো লঞ্চ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেড়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, লঞ্চে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সার্বক্ষণিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে না। কোনো কোনো রুটে যাত্রীর চাপ থাকলেও কোনো কোনো রুটে যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কম। ভোলা, চরফ্যাশন, বরগুনা রুটে যাত্রীর চাপ রয়েছে। তবে যাত্রী কম বরিশালে রুটে। কারণ পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এখন তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া যায়। বরিশাল রুটের যাত্রীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমে গেছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ঢাকা নৌবন্দর থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি রুটে এ বছর ঈদ করতে সদরঘাট হয়ে ঘরে ফিরবেন প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। আষাঢ় মাস হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করা হচ্ছে নৌপথে চলাচলে কিছু সতকর্তার কথা বলা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে আগামী বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার (২৮,২৯ ও ৩০ জুন) ছুটি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার একদিন ছুটি বাড়িয়ে দেয়। মঙ্গলবার (২৭ জুন) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই এবার ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচদিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
জিসিজি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।