ঢাকা: সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে রেখে বিল পাস হয়েছে।
এ সংক্রান্ত সংশোধনী এনে বুধবার (৫ জুলাই) ‘বাংলাদেশ সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্ব (সংশোধন) বিল–২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়।
বিলটি পাসের জন্য প্রস্তাব করেন সংসদ কাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস করা হয়।
বিলটির সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, এই আইন সংশোধন করে পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা খর্ব করা হল। পিপিপির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী। তারপরও হঠাৎ কেন এটা সরকারের কাছে নিতে হচ্ছে।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা খর্ব করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এখন তাদের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুমতি নিতে হবে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনের একটি ইউনিট, তাহলে কেন এখানে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। এভাবে সংশোধন করা হলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। পিপিপিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। এখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ইনডেমনিটির মতো আইন করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পিপিপিতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কেউ ঢুকতে পারেননি। যারা ঢুকেছেন সবাই বড় ব্যবসায়ী।
এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বড় শিল্প স্থাপিত হয় না। আস্থাভাজন ছাড়া কেউ কি কোনো বড় প্রকল্প পায়?
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হয়েছে। এতে করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরও বাড়বে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একটা কর্তৃপক্ষ স্বাধীন হতে পারে না।
কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা কমে যাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করেছিলাম বিরোধীদল এ বিষয়টিকে প্রশংসা করবেন যে সরকারের কাছে ক্ষমতা, কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা নয়। সেটা না করে তারা বলছেন কর্তৃপক্ষকেই ক্ষমতাবান করতে হবে এবং সরকারকে ক্ষমতাহীন করতে হবে। এটা পার্লামেন্টারি সিস্টেমে হয় না। সরকার চলে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী। সরকারকে এড়িয়ে কোনো কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত ক্ষমতা বা স্বাধীনতা দেওয়া যায় না বলেই এ সংশোধনী আনা হয়েছে। এটি অত্যন্ত সময় উপযোগী। বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনা স্ববিরোধী। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়ানোর জন্য এ সংশোধনী আনা হয়েছে। পিপিপির মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এই বিল আনা হয়েছে।
এই আইনের ৪ নম্বর ধারার ৩ উপধারায় এতদিন বলা ছিল, আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলী সম্পাদনের ক্ষেত্রে পিপিপি কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হবে। এখানে সংশোধনী এনে ‘স্বাধীন’ শব্দটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এতদিন আইনে পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতা বোর্ড অব গভর্নর্সের হাতে ছিল। এখানে সংশোধন করে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার। বিদ্যমান আইনে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদনের ক্ষমতা বোর্ড অব গভর্নর্সের হাতে ছিল। এটি পরিবর্তন করে এই ক্ষমতা সরকারের হাতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিলে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৩
এসকে/আরএইচ