বান্দরবান: বান্দরবান জেল কারাগারে ৪০দিন হাজতবাস করে জামিনে বেরিয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন সুয়ালক এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার রকি বড়ুয়া (২৫) ওরফে ‘রকি ভাই’।
বান্দরবান সদর উপজেলায় একসময় ছিনতাইয়ের ঘটনা শূন্যের কোটায় থাকলেও এখন আবারও সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে ছিনতাই কাজে নেমেছেন রকি ও তার সহযোগীরা।
রকি বড়ুয়া এলাকায় ‘রকি ভাই’ নামে পরিচিত আর তার আতঙ্কে এখন পর্যটন নগরী বান্দরবান সড়কে চলাচল করতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ জনগণ।
গত ৫ জুলাই (বুধবার) গভীর রাতে এমনই এক ছিনতাই অপারেশনে নামে রকি ও তার গ্যাং।
এদিন রাত ১২টায় চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান আসার পথে সুয়ালকের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি মাইক্রোবাসকে গতিরোধ করে ছিনতাই করার কৌশল আঁটে রকি। পরে মাইক্রোবাসচালক বুদ্ধি খাটিয়ে গতি বাড়িয়ে রকিদের ওভারটেক করে চলে যায়, এতে রক্ষা পায় গাড়ির সব যাত্রীরা।
মাইক্রোবাসে থাকা বান্দরবানে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই গাড়ির যাত্রী একুশে টেলিভিশনের বান্দরবান প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম টিটু বাংলানিউজকে বলেন, রাতবিরাতে ‘রকি ভাই ’ এর আতঙ্কে এখন বান্দরবান সড়কে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। পর্যটন নগরী বান্দরবানের প্রবেশদ্বার এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আরো পুলিশ মোতায়েন থাকা জরুরি।
মাইক্রোবাসচালক মো.লোকমান বাংলানিউজকে বলেন, রকি বড়ুয়া ও তাদের কিশোর গ্যাংদের যথাযথ বিচার হতেই হবে। তাহলে আর কোনো সন্ত্রাসী মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই গ্যাং সুয়ালক এলাকায় থাকে এবং সুযোগ পেলেই পথচারী, যানবাহন আরোহীদের ছিনতাই করে।
সংবাদকর্মীদের মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে ছিনতাইচেষ্টার ঘটনার বিষয়ে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জামিনে বের হয়ে রকি আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে এমন সংবাদ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি আমরা তদারকি করছি।
তিনি আরও বলেন, পর্যটন নগরী বান্দরবানে যাতে সবাই শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে পারে সেজন্য পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে এবং সুয়ালক যাতে নিয়মিত পুলিশের টহল দল অবস্থান করে নিরাপত্তা জোরদার করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে মারধর, জখম, চুরি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপরাধে গত ৮ এপ্রিল বান্দরবান সদর থানায় বিশ্বজিৎ দাশ নামে এক যুবক পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৩,৩২৩,৩৭৯,৫০৬ ধারায় রকির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে রকিকে আটক করে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে রকি জামিন প্রার্থনা করলে আদালত গত ১৮ মে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
বান্দরবান কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক একে ফজলুল হক বাংলানিউজকে জানান, গত ৮ এপ্রিল বান্দরবান সদর থানায় একটি মামলার প্রেক্ষিতে রকি বড়ুয়াকে আদালতে তোলা হয়েছিল এবং কয়েকদিন হাজতবাস করে গত ১৮মে তার জামিন মঞ্জুর হয়।
এদিকে জামিন পেয়েই রকি তার আগের রূপেই ফিরেছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতে কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে এলে তাদের ধরে টাকা, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিস হাতিয়ে নিচ্ছে রকি ও তার গ্যাং। রাতে মূল সড়কে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সাধারণ জনগণের সামনে গিয়ে ভয়ভীতি কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রাজীব বড়ুয়ার সন্তান রকি বড়য়া। অল্প লেখাপড়া করেই পরিবারের অবাধ্য হয়ে জড়িয়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ে। আর গ্যাং তৈরি করে সহযোগীদের নিয়ে অবস্থান করেন বান্দরবানের সুয়ালক এলাকায়।
রকির নামে সাতকানিয়া ও বান্দরবান থানায় ৮টিরও বেশি চুরি, ছিনতাই এবং মাদক মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২৩
এসএএইচ