জামালপুর থেকে ফিরে: বাংলানিউজের সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রায় এক মাস হতে চলল। কিন্তু এখনও অধরা বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত।
শনিবার (৮ জুলাই) বিকেলে নিজেদের আতঙ্কের কথা বাংলানিউজের কাছে প্রকাশ করেন নিহত নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।
তিনি বলেন, আমার বাবার হত্যাকাণ্ডে বাবু ও তার ছেলে সরাসরি জড়িত ছিল। তাদের নেতৃত্বেই আমার বাবা খুন হন। এ ঘটনার পেছনে আরও মাস্টারমাইন্ড রয়েছে। বাবার মাথায় সন্ত্রাসী রিফাত ইট দিয়ে আঘাত করে। সে বন্দুক নিয়ে চলাফেরা করতো, যার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তার গ্যাং গ্রুপের আরেক সদস্য রাকিবিল্লাহ (নাদিম হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামি)। সেও খুব ভয়ংকর সন্ত্রাসী। আমার বাবাকে এই রাকিবিল্লাহ সেদিন খুব মেরেছে। এরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি।
জান্নাত আরও বলেন, বন্দুক নিয়ে রিফাত কীভাবে চলতো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা আগে কখনো খোঁজখবর নেয়নি। সে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতেই এসব অস্ত্র নিয়ে গ্যাং গ্রুপ গড়ে তুলেছিল। সেই রিফাতকে এখনো খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এতে আমরা হতাশ। আমার বাবার খুনি রিফাত গেল কোথায়, রিফাত বাহিনী কি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে?
খুনি রিফাতসহ এজাহারভুক্ত ১৭ আসামি এখনো অধরা। খুনিরা বাইরে থাকলে আমরা তো অনিরাপদবোধ করবই। ইতিমধ্যে আমাদের হয়ে কথা বলায় রিফাতের পক্ষ নিয়ে একজনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। রিফাত বাহিনীসহ আমার বাবা হত্যার পেছনে যত কালো হাত ছিল সব মাস্টারমাইন্ডকে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়কও ছিলেন। তিনিই সাংবাদিক নাদিমকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন। সংশ্লিষ্ট মামলার দুই নম্বর আসামি তিনি।
রিফাতের ব্যাপারে জানতে চাইলে বকশিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, আমরা তাকে খুঁজছি। নাদিম হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি রয়েছে। বাকিরা সম্পৃক্ত থাকায় গ্রেপ্তার। গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
এ বিষয়ে জামালপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলীর সঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। প্রথমে তাকে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে ও পরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যান সাংবাদিক নাদিম।
এ ঘটনায় নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে নামীয় ২২ জন ও অজ্ঞাত নামা আরও ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে বাবু চেয়ারম্যানসহ ১৪ আসামি কারাগারে রয়েছে। ১৪ জনের মধ্যে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু, মনিরুজ্জামান মনির ও রেজাউল হত্যার দ্বায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৩
এসএফ/এমজে