কক্সবাজার: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা, আবাসন, শিবিরের আইন শৃংখলা পরিস্থিতিসহ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার কথা জানান বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গারা।
বুধবার (১২ জুলাই) উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে অ্যাকশনএইড পরিচালিত একটি কমিউনিটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ইমাম ও যুবকদের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট বৈঠক করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
বৈঠকে রোহিঙ্গা কমিউনিটির দশ জন সদস্য অংশ নেন। বৈঠক শেষে মাদ্রাসা শিক্ষক মো. ইদ্রিস বলেন, আমরা প্রতিনিধিদলের কাছে প্রথমেই বলেছি, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় ৭ বছরের বেশি হয়েছে। সারা বিশ্ব রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও করছে কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বিষয়টি বর্তমানে কোন পর্যায়ে আছে জানতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা খুব কষ্টে আছে। সম্প্রতি ক্যাম্পগুলোতে খুনোখুনি, সংঘাত আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কীভাবে জোরদার করা যায়, বিষয়গুলো আমরা তাদের তুলে ধরেছি। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
মো. ইদ্রিস আরও বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা শিশুরা শিবিরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেহেতু দেরি হচ্ছে, তাই লেখাপড়ার মান উন্নয়ন ও ক্যাম্পগুলোতে উচ্চ শিক্ষা চালু করা যায় কি না, সে বিষয়টি আমরা বলেছি।
বুধবার দুপুরের দিকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বালুখালী নয় নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ই-ভাউচার আউটলেট পরিদর্শনে গেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মাস্টার মুহিব উল্লাহর সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতারা প্রতিনিধিদলের কাছে লিখিত আবেদন তুলে দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংগঠনটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনাকে গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘোষনায় বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের পাশে আছে। এই জন্য আমাদের কিছু দাবি তাদের কাছে তুলে ধরেছি। যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিকভাবে চাইলেই মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করতে পারে। চিঠিতে এ বিষয়ে আমরা তাদের অনুরোধ জানিয়েছি।
উখিয়ার ক্যাম্প ৮, ৯ ও ১০ এর দায়িত্বরত ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) সরওয়ার কামাল বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদল বুধবার সকালে শিবিরে পৌঁছেই বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করে। এ সময় তারা রেজিস্ট্রেশনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে।
ইউএনএফপির পুষ্টি সেন্টার, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ই-ভাউচার আউটলেট ঘুরে দেখে কালচারাল মেমোরি সেন্টার, রোহিঙ্গা নারী শিশুদের নিরাপদ সেন্টার ও সবশেষে ১১ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডার ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
আরআরআরসি কার্যালয়ে বৈঠক
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে বিকেলে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
বৈঠক শেষে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিশেষ করে ২০১৭ সালের পর থেকে যেসব সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা শিবিরে নানা ধরনের মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, এসবের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। আমরা আলোচনায় তাদের সহযোগিতার বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া, মাথাপিছু বরাদ্দের প্রথমে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার এবং জুনের ১ তারিখ থেকে আরও দুই ডলার কমিয়ে ৮ ডলার করার বিষয়টি বিশেষভাবে তাদের বলেছি। এ বিষয়ে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতির প্রশংসা করেছে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আজকে তারা রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে সরাসরি সার্বিক পরিস্থিতি দেখেছেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দেখে তারা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমরা আশা করছি, রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যে সহযোগিতা, তা অব্যাহত থাকবে এবং আরও ত্বরান্বিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
এসবি/এমজেএফ