ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সৌদিতে আগুনে পুড়ে নিহতদের মধ্যে চারজনের বাড়ি বাগমারায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৩
সৌদিতে আগুনে পুড়ে নিহতদের মধ্যে চারজনের বাড়ি বাগমারায় নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম বইছে।

রাজশাহী: সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরে থাকা দাম্মামের হুফুফ শহরের আহসা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকার একটি সোফা কারখানায় শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।  

শনিবার (১৫ জুলাই) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়।

এতে মারা গেছেন নয়জন। এর মধ্যে সাতজন বাংলাদেশি।

নিহতদের মধ্যে চারজনেরই বাড়ি রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায়। এদের মধ্যে তিনজনই বাগমারা উপজেলার বরাইপাড়া গ্রামের। এরা হলেন- জফির উদ্দিনের ছেলে মো. রুবেল হোসাইন, জমির উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম ও শাহাদত হোসেনের ছেলে আরিফ।

নিহতদের মধ্যে সাজেদুল ও আরিফ সম্পর্কে চাচা ভাতিজা আর নিহত রুবেল ছিলেন তাদের প্রতিবেশি। এদিকে তাদের মৃত্যুর খবরে গ্রামের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার ও স্বজনরা, সরকারের কাছে দ্রুত সম্ভব মরদেহ ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন।

এছাড়া বাগমারা উপজেলার বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের আনিসুর রহমানের ছেলে ফিরুজ আলী সরদারও মারা গেছেন। তারা কেউ ছয়মাস আগে কেউ তিন বছর ধরে স্বপ্নের খোঁজে সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়েছিলেন।

নিহত ফিরুজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন ও প্রতিবেশিরা শোকের মাতম করছেন। এই শোকে অনেকে আবার বাকরুদ্ধ। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা ঘটনার শোনার পর থেকে অঝোরে কাঁদছেন।

নিহত ফিরুজের বাবা আনিসুর বলেন, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ভালো আছে বলে জানিয়েছিলেন।  

তিনি জানান, ছয় মাস আগে তার ছেরে সৌদিতে গিয়েছিলেন। তিনি ছেলের মরদেহ দ্রুত ফেরত চান।  

তিনি বলেন, তার ছেলেকে জীবিত তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই অন্তত ছেলের মরদেহ নিজ এলাকায় নিয়ে এসে দাফন-কাফন করতে চান।

এদিকে নিহত রুবেল হোসাইনের বাবা জফির উদ্দিন ছেলেকে হারিয়ে এখন পাগল প্রায়। শোকে হতবিহ্বল হয়ে এখন অস্বাভাবিক আচরণ করছেন! এই দুর্ঘটনা কোনোভাবেই তিনি মেনে নিতেই পারছেন না।

তিনি বলেন, শুক্রবার ঘটনার পরপরই তারা মৃত্যুর খবর পান। তবে নিশ্চিত হতে পারেননি যে তার ছেলে আছে কী নেই। শনিবার সকালে সেখানে থেকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

আর সাজেদুল ইসলাম গেল আট বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তারও মৃত্যু হয়েছে। তারা একসঙ্গেই থাকতেন। এদের হাত ধরে একই কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন উপজেলার একই গ্রামের রুবেল হোসাইন। মাত্র ছয় মাস আগেই তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এর মধ্যেই মারা গেলেন।

এছাড়া বাগমারা উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের ফিরুজ আলী সরদার (৩৯) ছয় বছর আগে গিয়েছিলেন সদূর সৌদি আরবে।  

তার বাবা আনিসুর রহমান বলেন, ছেলে যখন বিদেশ যেতে চায়। তখন কিছু টাকা জমিয়ে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। এখন তাকে হারিয়ে পুরো পরিবারটিই দিশেহারা হয়ে পড়েছে!

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ঘটনার পর শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসন থেকে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের হয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী শনিবার বিকেলে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এরই মধ্যে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার সুমন চৌধুরী  জানান, সরকারিভাবে তাদের পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে তাদের কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি মনিটরিং করছেন।

শনিবার (১৫ জুলাই) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, শুক্রবার (১৪ জুলাই)। বিকেল ৪টার দিকে আল আহসা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় একটি সোফা কারখানায় অগ্নিকাণ্ড হয়। এতে নয়জন অভিবাসী বাংলাদেশি ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন ও দুইজন আহত হন।

খবর পেয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নির্দেশে কাউন্সিলর (শ্রম) মুহাম্মাদ রেজায়ে রাব্বী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। তারা বিষয়টি মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন>>>>>>>সৌদি আরবে অগ্নিকাণ্ডে ৯ বাংলাদেশির মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।