ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মায় নিখোঁজ হওয়ার পর মিলল ২ শিশুর মরদেহ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
পদ্মায় নিখোঁজ হওয়ার পর মিলল ২ শিশুর মরদেহ

রাজশাহী: রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে নিখোঁজ হওয়ার পর দিন দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর শনিবার (২২ জুলাই) দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন ফারার সার্ভিসের ডুবুরিরা।

এর মধ্যে দুপুর ২টার দিকে চারঘাটের ইউসুফপুর থেকে ইশতিয়াক হোসেন সিয়ামের (১২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গজ দূরেই সজীব হোসেন সানজিদের (১২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তারা পরস্পর ফুপাতো ও মামাতো ভাই। ইশতিয়াক হোসেন (১২) তার মামাতো বোন আয়শা খাতুনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিল। আর সজীব হোসেন (১২) এসেছিল চাচাতো বোনের (আয়শা খাতুন) বিয়েতে। কিন্তু শুক্রবার (২১ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে তারা দু’জন নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ওই পরিবারে কান্নার রোল পড়ে যায়। এলাকাবাসীর মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। আজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ জানান, সিয়ামের মরদেহ শনিবার দুপুর ২টার দিকে চারঘাটের ইউসুফপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল অর্থাৎ যেখানে তারা দু’জন ডুবে গিয়েছিল সেখান থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরেই সানজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মরদেহ ঘটনাস্থলের পাশে পাওয়া গেলেও সিয়ামের মরদেহ মিলেছে পাশের উপজেলা সীমান্তে। তীব্র স্রোতে সানজিদের মরদেহ এত দূর ভেসে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আর নদীতে তীব্র স্রোত ও বাতাসের কারণে মরদেহ উদ্ধারেও বেগ পেতে হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে চার জনের ডুবুরি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে নামে। আলো স্বল্পতার জন্য সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রথম দিনের অভিযান স্থগিত করা হয়। এরপর শনিবার ভোর ৬টা থেকে আবারও অভিযান শুরু হয়। বিকেল ৪টায় সানজিদকে উদ্ধারের পর প্রায় ২৮ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। নিহত দুইজনের মরদেহ পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এর আগে শুক্রবার (২১ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে গোসলে নেমে মহানগরের মতিহার থানার চর সাতবাড়িয়া ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে নিখোঁজ হয় তারা। নিহত ইশতিয়াক হোসেন সিয়াম (১২) রাজশাহী মহানগরীর চর সাতবাড়িয়া এলাকার শুকুর আলীর ছেলে। সে মহানগরীর ডাশমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আর সজীব হোসেন সানজিদ (১২) মহানগরীর চর শ্যামপুর এলাকার নেকবর আলীর ছেলে।

মহানগরের সাতবাড়িয়া এলাকায় আশরাফুল ইসলামের মেয়ে আয়শা খাতুনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিল সিয়াম ও সানজিদ। বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সবাই যখন বরযাত্রীদের আপ্যায়নের আয়োজনে ব্যস্ত তখন অন্যদের সঙ্গে সজীব ও সানজিদ পদ্মায় গোসল করতে যায়। গোসল শেষে বাকিরা উঠে এলেও সিয়াম ও সানজিদ ডুবে যায়। এর পর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। তাদের দু’জনের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় বিয়েবাড়ির আনন্দ শোকের ছায়ায় ঢেকে যায়।

সিয়ামের বাবা শুকুর আলী পেশায় একজন ভ্যানচালক। আর সানজিদের বাবা নেকবর আলী রিকশাচালক। তারা বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) তিন দিনের জন্য মতিহার থানার সাতবাড়িয়া এলাকার আশরাফ আলীর মেয়ে আয়শা খাতুনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিল।

সানজিদের দাদি জোছনা বেগম বলেন, বরযাত্রীদের জন্য রান্নাও করা হয়েছিল। তারা এসেছিলেন দুপুরে খাওয়ার ঠিক আগে। কিন্তু দুই শিশু পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়ার খবর শুনে আর কেউ বিয়েবাড়িতে দাঁড়াননি।

বরযাত্রীরা খাওয়াদাওয়া সব বাদ দিয়ে কেবল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন এবং এর পরপরই মেয়ে নিয়ে চলে গেছেন। বিয়েবাড়ির আনন্দ মুহূর্তেই শোকের মাতমে পরিণত হয়েছে। তারা সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। শোক আর আহাজারিতে ওই এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।