ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমি যেন হত্যার শিকার শেষ সাংবাদিকের মেয়ে হই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৩
‘আমি যেন হত্যার শিকার শেষ সাংবাদিকের মেয়ে হই’

ঢাকা: বাংলানিউজের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমের হত্যার বিচার চেয়েছেন তার মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।  

তিনি বলেন, আমার বাবাকে যেদিন কবর দেওয়া হয়, সেদিন থেকে যে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি, আজ পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

আমি যেন হত্যার শিকার শেষ সাংবাদিকের মেয়ে হই। আমার মতন কোনো সাংবাদিকের মেয়েকে যেন আর রাস্তায় না দাঁড়াতে হয়।  

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বন্ধ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

জান্নাত বলেন, আমার বাবার ওপর আগেও হামলা হয়েছিল। কিন্তু সেই হামলার বিচার আমরা পাইনি। আমার বাবা যদি সেই হামলাগুলোর বিচার পেতেন, তাহলে অকালে তাকে চলে যেতে হত না। আমার বাবার ওপর এতগুলো হামলার মূল কারণ ছিল, আমার বাবা স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোক ছিলেন।  

তিনি বলেন, আমার বাবা সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতেন। এই সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই আমার বাবার ওপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে। তখন আমার বাবা থানায় জিডিও করেছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবার থেকে যে মামলা করা হয়, তাতে আগের সেই জিডিগুলো অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি।  

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ও ৭১ টেলিভিশনে শাহিনা বেগম ও বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিউজ করেন যে, রাজাকারের সন্তানেরা আওয়ামী লীগের কমিটিতে। সেই কমিটি হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকির শিকার হতে হয়। সে সময় থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও থানা থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিচার না করার পর হামলাকারীরা আরও উৎসাহিত হয়ে যায়। এরপর গত ১৪ জুন বাবু চেয়ারম্যানকে উসকে দিয়ে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়।  

নাদিম হত্যা মামলায় শুধুমাত্র সিসিটিভিতে ফুটেজের ওপর নির্ভর করলে হবে না, সিসিটিভির বাইরে অনেক ঘটনা আছে- উল্লেখ করে সাংবাদিক নাদিমের কন্যা জান্নাত বলেন, সিসিটিভির বাইরে যে পরিকল্পনাকারী খলনায়িকা ও খলনায়ক আছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে তারা বিভিন্নভাবে মামলাকে প্রভাবিত যেমন করছে, তেমনি সামনে আরও করবে। পাশাপাশি আমাদের শঙ্কা বাবু চেয়ারম্যানের ভাই পুলিশের সাবেক আইজিপি মোখলেসুর রহমান পান্না বিভিন্নভাবে মামলাকে প্রভাবিত করবে। তাই আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে চাওয়া, এই মামলার যেন দ্রুত বিচার করা হয়। পাশাপাশি বাবু চেয়ারম্যান ও শাহিনা বেগমকে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।  

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার তদন্তকারী সংস্থা ওই মামলার জন্য ১০২ বার সময় নিয়েছে। তাহলে আমাদের বুঝতে বাকি নেই যে, তারা কেমন তদন্ত করছে। আর কেনই বা এই তদন্ত এখনো শেষ হচ্ছে না।  

তিনি আরও বলেন,  সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার নেপথ্যে যারা আছেন, তাদের সর্বপ্রথম গ্রেপ্তার করতে হবে। আর মামলার এজাহারভুক্ত সব আসামিকে এখনই আইনের আওতায় আনতে হবে। হত্যাকাণ্ডের পেছনের নির্দেশ দাতাদেরও অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।  

সাংবাদিক হত্যার কারণে দেশের ভাব মূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, সাংবাদিক হত্যার সটিক বিচার না হওয়ার কারণে আজকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দেশে ও দেশের বাইরে নষ্ট হয়েছে। তাই দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সাগর-রুনি, নাদিমসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে হবে। এবং এসব হত্যায় পেছন থেকে যারা কল-কাঠি নাড়িয়েছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।  

সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে একটি স্মারকলিপি দেয়।  

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজে মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুর আলম, ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৩
ইএসএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।