ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিমর্ষ ছিলেন জাহাঙ্গীর, ক্ষমা চেয়েছেন পরিবারের কাছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৩
বিমর্ষ ছিলেন জাহাঙ্গীর, ক্ষমা চেয়েছেন পরিবারের কাছে

রাজশাহী: ফাঁসির আগে শেষবারের মতো জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে দেখা করতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়েছিলেন তার পরিবার। তবে এ সময় ভীষণ বিমর্ষ ছিলেন, ফাঁসি হতে যাওয়া জাহাঙ্গীর।

যেকোনো মুহূর্তে ফাঁসি কার্যকর হতে পারে তাই পরিবারের সঙ্গে শেষ দেখায় সবার কাছে ক্ষমা চান।

মঙ্গলবার (২৪ জুলাই)  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারকে সাক্ষাতের জন্য মঙ্গলবার ডাকে কারা কর্তৃপক্ষ। জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিনসহ পরিবারের ৩০ জন সদস্য তার সঙ্গে শেষ দেখার সুযোগ পান। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরের দুই ভাই, ভাবি ও ফুপু ছিলেন। কারাগারে প্রবেশের সময় সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি জমা দিতে হয়।

দুপুর ১টায় তাদেরকে দেখা করার জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক ঢোকানো হয়। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তাদের কারাগারের পেছনের গেট দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীর আলমের ভাই মিজানুর রহমান জানান, দেখা করার সময় জাহাঙ্গীর একেবারেই বিমর্ষ ছিলেন। বলেছেন তিনি ন্যায় বিচার পাননি। শেষ দেখা হওয়ায় পরিবারের সবার কাছে ক্ষমা চান। বলেন এটাই তার শেষ দেখা। নিজের দাফন-কাফন ও কোথায় কবর দেওয়া হবে সেসব বিষয়েও কিছু বলেননি। আর গণমাধ্যমে রিট খারিজ বা অন্য কোনো ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চাননি মিজানুর রহমান।

মিজানুরের স্ত্রী লতিফা বেগম জানান, তিনি দেবরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কিনা বা কিছু খাবেন কিনা। কিন্তু জাহাঙ্গীর বলেছেন, তিনি কিছুই খেতে চান না। খুবই মন খারাপ ছিল তার। পরিবারের সবাইকে ভালো থাকার জন্য বলে কান্নাকাটিও করেছেন। এরপর পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। আর বিশেষ কিছুই বলেননি জাহাঙ্গীর।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে প্রবেশের আগে জাহাঙ্গীরের ভাই মিজানুর রহমান বলেন, গত রোববার (২৩ জুলাই) কারা কর্তৃপক্ষ তাদের চিঠি দিয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা করতে বলে। তবে আপিল বিভাগে রিট পিটিশন পেন্ডিং থাকায় সেদিন তারা দেখা করেননি। মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগ রিট খারিজ করে দেওয়ায় তারা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।

এদিকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে তার সাথে কখন দেখা করতে আসবেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কামাল হোসেন জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) থেকে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যেই যেকোনো সময় আদালতের দেওয়া দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।

অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

এর আগে জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাবের করা রিটের শুনানি শেষে গত ১৭ জুলাই বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে আদেশ দেন। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চাওয়া হয়। আর ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়। পরে দুই আসামি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসা থেকে নিখোঁজ হন ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। ৩ ফেব্রুয়ারি বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ ওইদিন নগরীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

এরপর ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। পরে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও তার স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। তবে আপিলে সাজা কমে যাবজ্জীবন হওয়া দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখেন। ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৩
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।