ফরিদপুর: হত্যার পর শিশু মুরসালিনের মরদেহ বস্তাবন্দি করে পুঁতে রাখা হয়েছিল নদীর পাড়ে। ঠিক এক বছর পরে শিশুরা খেলাধুলা করার সময় ফুটবল মনে করে একটি গোলাকার মাটির কুণ্ডলী লাথি দিতেই বেরিয়ে আসে মানুষের মাথার খুলি।
এরপর পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে হত্যা রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি ঘাতক ওই শিশুর সৎ বাবাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর নিজের হাতে সৎ ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে পিবিআই ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (অ.দ্বা.) মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নিহত মুরসালিন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের আশাপুরের দরিদ্র শ্রমিক মো. আশরাফুল শেখ ও ইতি খাতুন দম্পতির সন্তান।
জানা গেছে, প্রথম স্বামী আশরাফুলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে ইতির বিয়ে হয় মিজানুর রহমান মিজান (৩৫) নামে আরেক যুবকের সঙ্গে। মিজান-ইতি দম্পতির ঘরেও এক সন্তান রয়েছে।
পিবিআই জানায়, মিজান তার স্ত্রী ইতিকে মারধর করতো বলে গত বছরের ২৩ জুলাই ইতি মুরসালিনকে তার মায়ের কাছে রেখে ঢাকা চলে যায়। এর দুদিন পর গত বছরের ২৫ জুলাই মুরসালিন নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় মধুখালী থানায় মা ইতি খাতুন একটি জিডি করলেও কোনো খোঁজ মিলেনি ছেলের।
এদিকে মুরসালিন নিখোঁজ হওয়ার ৬ মাস পরে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর মধুখালীর পশ্চিম গোন্দারদিয়া সরদারপাড়ায় চন্দনা-বারাশিয়া নদীর পাড়ে বল খেলার সময় প্রথমে একটি মাথার খুলি বের হয়ে এলে সন্দেহবশত প্লাস্টিকের বস্তা খুলে মানুষের হাড়গোড় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পলিশ প্লাস্টিকের ওই বস্তা থেকে প্রায় ৭০টি হাড়গোড় উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মধুখালী থানার এসআই সৈয়দ তোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্তের পরেও মামলার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটির তদন্ত ভার পিবিআইতে ন্যস্ত হয়। পিবিআই ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ মামলাটি তদন্তের দ্বায়িত্ব দেন এসআই রামপ্রসাদ ঘোষকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ফরিদপুরের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রামপ্রসাদ ঘোষ বলেন, হাড়গোড়ের পরিচয় শনাক্তের জন্য শিশু মুরসালিনের নিখোঁজ হওয়ার জিডির সূত্র ধরে তার মা ইতি ও বাবা আশরাফুল শেখের ডিএনএ টেস্টের জন্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে মুরসালিনের পরিচয় মিলে। এরপর হত্যা রহস্য উদঘাটনের জন্য পিবিআই একটি স্পেশাল টিম গঠন করে।
এসআই রামপ্রসাদ ঘোষ বলেন, মামলা তদন্তের পর্যায়ে মুরসালিনের বাড়ির সামনের একটি চানাচুর ফ্যাক্টরির দারোয়ানের কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন সৎ বাবা মিজানকে তিনি মুরসালিনকে ডেকে নিতে দেখেছেন। এরপর গত রোববার রাতে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার ওয়াবদা মোড় থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে ফরিদপুরের ৫ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফরিদউদ্দীন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শিশু মুরসালিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন মিজান।
আসামি মিজান স্বীকারোক্তিতে জানায়, ঘটনার দিন সকালে তিনি মরিচ ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এসময় ঘর থেকে মুরসালিনকে বের হতে দেখে তাকে ডেকে নিয়ে তার মা কোথায় গিয়েছে জানতে চান। তবে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না পেয়ে তিনি মুরসালিনের কানে সজোরে থাপ্পড় মারেন। ওই থাপ্পড়ে কানের পর্দা ফেটে রক্তাক্ত মুরসালিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। এরপর সড়কের পাশে বড় ঘাসের আড়ালে মুরসালিনের লাশ লুকিয়ে রাখেন মিজান। রাতে ঘর থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে মুরসালিনের লাশ বস্তাবন্দি করে ঘাড়ে করে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে নিয়ে নদীর পাড়ে মাটির নিচে পুঁতে রেখে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০২৩
আরএ