ঢাকা, রবিবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

আন্তর্জাতিক মেরিনটেক বাংলাদেশ এক্সপো

মেরিটাইম সেক্টরের সক্ষমতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
মেরিটাইম সেক্টরের সক্ষমতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে

ঢাকা: বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের মেরিটাইম সেক্টরের (নৌ-বাণিজ্যের) যে সক্ষমতা অর্জন হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন পায়রা পোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক।  

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী পঞ্চম ‘আন্তর্জাতিক মেরিনটেক বাংলাদেশ এক্সপো অ্যান্ড ডায়ালগ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। পরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল গোলাম সাদেক।

গোলাম সাদেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার বেশিরভাগ বক্তৃতায় বলে থাকেন, আমরা এখন বায়ার থেকে বিল্ডারে পরিণত হচ্ছি। আমাদের মতন একটা নতুন দেশে যে এত পরিমাণ উদ্যোক্তা আছে তা অনেকেই বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের সক্ষমতা বিশ্বের সবার সামনে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি আমরা কাজগুলো কেন করছি এটা বিশ্বের সবার জানা দরকার আছে। এর ফলে আমাদের দেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। আমরা তাদের সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে এই মেরিটাইম সেক্টরকে দেশের মূল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের দেখিয়ে গেছেন যে, সমুদ্রকে কিভাবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি নতুন রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে। আমাদের এই মেরিটাইম সেক্টরের পুরোপুরি অগ্রযাত্রা হয়েছে ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে। যখন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আমাদের সমুদ্র সীমানা উদ্ধার করতে পেরেছি। এটা বর্তমান বিশ্বের একটা দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ, কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে উদ্ধার করতে পেরেছি। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সমুদ্রকে কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে মোট আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি এক লাখ ১২ হাজার ৯৪২ মিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে শুধুমাত্র সমুদ্র পথে সম্পাদিত হয়েছে নয় কোটি পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৯ মিলিয়ন টাকা। একই সময়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের আমদানি প্রায় ১৪ বিলিয়ন ও রপ্তানি প্রায় এক দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে মাত্র এক দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ সাত শতাংশ প্রটোকল ও সমুদ্র পথে সম্পাদিত হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ রূপকল্প-২০৪১ সালের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেখানে অবকাঠামো খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিক এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র লজিস্টিকস খাতই ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অংশ হিসেবে আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে রোলস রয়েলসের উদ্যোগে সমুদ্র পথে নাবিকবিহীন টেকনোলজি নির্ভর মেরিটাইম অটোনোমাস সারফেস শিপ আসছে। আমাদের নাবিকদেরও সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

এছাড়া বর্তমানে দেশে প্রায় পাঁচ হাজার অফিসার যাদের মধ্যে মাত্র ১০০ জন মহিলা অফিসার ও নয় হাজার নাবিক ওশান গোয়িং জাহাজে কর্মরত, যাদের মাধ্যমে প্রতি বছর আমাদের জিডিপিতে প্রায় ৫৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হচ্ছে। বিগত সময়ে গুরুত্ব না বোঝার কারণে নাবিকের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। যদিও সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫টি মেরিন একাডেমি ও দুইটি নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। একজন রেটিং ন্যূনতম এক হাজার ও একজন অফিসার থেকে প্রতিমাসে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ডলার করে ইনকাম করার সুযোগ আমাদের রয়েছে।

আয়োজক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক জানান মেরিনটেক প্রদর্শনীর মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোর মেরিটাইম সংক্রান্ত গৃহীত কৌশল ও নলেজ শেয়ারিং, জি-টু-জি ও জি-টু-বি পর্যায়ে জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং টেকসই করেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো, প্রচলিত আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতি, বিদেশি পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞদের কৌশল যাচাই-বাছাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে, যা একদিকে অর্থ ও সময় সাশ্রয় করবে। অন্যদিকে, মেরিটাইম অবকাঠামো দীর্ঘমেয়াদি চাপ সামলাতে সক্ষম হবে; টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যাবে।

প্রদর্শনীতে জাহাজ নির্মাতা-ডকইয়ার্ড ও শিপইয়ার্ড, জাহাজ মালিক ও শিপ এজেন্ট, শিপ রিসাইক্লিং, নকশা প্রণয়নকারী, বন্দর অপারেটর, সিঅ্যান্ডএফ, মেরিটাইম একাডেমি, নাবিক নিয়োগকারী সংস্থা, লঞ্চ ও কোস্টালশিপ, নেভিগেশন ও মেরিন ইকুইপমেন্ট, আমদানি ও রপ্তানিকারক সহ-প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সাইফ পাওয়ারটেক গ্রুপ, খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড, ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রাম ও রংপুর, আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শিপওয়েজ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (সিআইএলটি), বাংলাদেশ ফ্রেট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন, গ্রুপ নটকা ও ঢাকা ওয়াসা ছয়টি দেশের প্রায় ৭৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

প্রদর্শনীটি আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এক্সপোনেট এক্সিবিশনের উদ্যোগে ও নৌ-পরিবহন দপ্তরের সহযোগিতায় মেলায় ২০৩০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ- ডিজিটালাইজেশন এবং ডিকার্বনাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরকে পরিবেশবান্ধব করার লক্ষ্যে প্রদর্শনীর পাশাপাশি স্মার্ট পোর্ট, গ্রিন শিপ বিল্ডিং ও রিসাইক্লিং, শিপিং বিজনেস বিয়ন্ড বাউন্ডারি, মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্টেশন ও মেরিটাইম এডুকেশনের ওপর পাঁচটি নেটওয়ার্কিং কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন আহমদ, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কমডোর (অব.) সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম, বাংলাদেশ ফ্রেট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
ইএসএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।