খুলনা: খুলনায় বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা গ্রামের ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমি’র ৪ নারী ফুটবলারকে মারধরের পর এবার মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
মামলা তুলে না নিলে তাদের শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
চার নারী ফুটবলারকে বেঁধে মারধরের প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশে এমন সব দাবি করেন বক্তারা।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)’ খুলনা জেলা শাখা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
বিডিইআরএমের জেলা কমিটির সভাপতি সুব্রত কুমার মিস্ত্রীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিভুতোষ রায়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন - কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রী, অ্যাডভোকেট প্রসেঞ্জিত দত্ত, সভাপতি গীতা ফাউন্ডেশন, এলওনবি কমিটির সদস্য সালমা জাহান, জয়দেব দাস, শিল্পী গাইন, মিলন দাস, কিশোর রায়, রাম দাস, শান্তা মন্ডল, পবিত্র মন্ডল, বন্যা পালসহ অন্যান্যরা।
বক্তব্যে বক্তারা বলেন, নারী জাতির উত্থান ও জাগরণের অন্তরায় ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যা দেখে সমাজের অন্য কেউ এহেন জঘন্যতম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে না।
তারা আরও বলেন, যেখানে নারীরা খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে ফুটবলে। যেখানে পুরুষ ফুটবলাররা এখনও স্বর্ণ পদক আনতে পারেনি। সোনা এনেছে মেয়েরা। সেই মেয়েদের ওপর অত্যাচার করা মানেই হলো আমাদের সুনামটা বাধাগ্রস্ত করা। আমরা শুধু এই মেয়েদের জন্য কথা বলছি না। সব মেয়ে যারা খেলাধুলা করেন তাদের জন্য বলছি। অনেক তরুণেরা স্পোর্টসে যায় না, তারা মাদকে জড়িয়ে পড়েন, অন্যান্য অপরাধচক্রে জড়িয়ে পড়েন। আমরা যারা মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি সবার একই দাবি, চার নারী ফুটবলারকে মারধরের ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে যেন অপরাধীদের শাস্তির বিধান হয়।
এদিকে, অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকিতে নারী ফুটবলাররা নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী নারী ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন তিন্নি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
ঘটনার বিবরণ:
সাদিয়া নাসরিন খেলাধুলা করুক, তা চায় না প্রতিবেশী নূর আলম ও তার পরিবার। সাদিয়ার পরিবারকে নূর আলমের মেয়ে নুপুর খাতুন শাসিয়ে বলে, ‘আমাদের গ্রামের কোনো মেয়েকে আমি ফুটবল খেলতে দেব না। ’ বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকে সাদিয়ার পরিবার। সাদিয়া প্রতিবেশীদের ভয়ে বোরকা পরে খেলতে আসেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাদিয়ার হাফপ্যান্ট পরা ছবি তুলে তার মা-বাবাকে দেখায় নুপুর। তাতেও সাদিয়ার মা-বাবা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ছবি তোলার বিষয় নিয়ে সাদিয়াকে মারধর করেন নুপুর। বিষয়টি সাদিয়ার মা রাবেয়া বেগম খেলোয়াড় টিমকে জানায়। জানতে পেরে খেলোয়াড় টিমের অন্যতম সদস্য মঙ্গলী বাগচি, জুঁই মণ্ডল ও তার সঙ্গীরা বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে নুপুরের বাড়িতে যান বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে। সাদিয়া ও রাবেয়া বেগমকে সঙ্গে নিয়ে যায় তারা। ওই সময় নুপুরের বাবা নূর আলম রড নিয়ে এগিয়ে আসেন এবং খেলোয়াড়দের মারধর করতে থাকেন। এরই মধ্যে নূর আলম রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে মঙ্গলী বাকচি জ্ঞান হারায়। এই সময় মঙ্গলী ও জুঁইকে চেয়ারে বেঁধে রাখেন নূর আলম এবং জুঁইকে হুমকি দেন, ‘তোদের ক্ষত জায়গায় লবণ দেব এবং তুই সবাইবে বলবি আমি না, সাদিয়া মেরেছে তোদের। নইলে আমি নিজেকে রক্তাক্ত করে তোদের নামে কেস দেব। ’ এরই মধ্যে ক্যাপ্টেন ঋতু বৈরাগী, হাজেরা খাতুন পালিয়ে থানায় এসে খবর দেয় এবং সুপার কুইন একাডেমির সভাপতিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে মঙ্গলী ও জুঁইকে উদ্ধার করে।
আহত অবস্থায় মঙ্গলী বাগচি, হাজেরা খাতুন, জুঁই মণ্ডল এবং সাদিয়া নাসরিনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে এ ঘটনায় সাদিয়া নাসরিন বাদী হয়ে বটিয়াঘাটা থানায় ছয় জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আসামিরা হলেন- তেঁতুলতলা স্কুল মাঠ এলাকার আলাউদ্দিন (১৬), সালাউদ্দিন (২২), নূর আলম (৪৮), রঞ্জি বেগম (৪০), মনোয়ারা বেগম (৫৫) ও নুপুর খাতুন (২২)।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সালাউদ্দিন, রঞ্জি বেগম ও নুপুর খাতুনের জামিন মঞ্জুর হয়।
অর্থাৎ, চার নারী ফুটবলারকে মারধরের ঘটনায় গ্রেপ্তার হলেন মাত্র ১ জন (নূর আলম)।
এদিকে জামিনে থাকা আসামিরা মামলার বাদী খুলনা জেলা অর্নূধ্ব-১৭ দলের খেলোয়াড় সাদিয়া আক্তারকে অ্যাসিড নিক্ষেপসহ নানা হুমকিধামকি দিচ্ছেন। পুলিশ বলছে, আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
এমআরএম/এসএএইচ