ঢাকা: রাকিব নামে ফরিদপুরের ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত রোষানল থেকে বাঁচতে জীবনের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন ছামাদ খান নামে এক ভুক্তভোগী।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।
ছামাদ খান বলেন, আমি পেশায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। তা ছাড়া একটি রেন্ট এ কারের ব্যবসা আছে। ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা রাকিব ২০১৭ সালে আমার নিজ থানা মধুখালীতে পরিদর্শক (ছামাদের ভাষ্যে ওসি তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন আমার পারিবারিক একটি মামলা হয়। সেই মামলায় ওসি রাকিব নিজে তদন্ত করে। এবং আমার কাছ থেকে মোটা টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি তাকে ৩০ হাজার টাকা দিই। কিন্তু তার চাহিদা মোতাবেক টাকা না দেওয়ায় তিনি আমাকে ‘পরিণাম অনেক খারাপ হবে’ বলে হুমকি দেন।
ওই সময় আমার একটি মাইক্রোবাস রেন্ট এ কারে ভাড়ায় চলতো। ডিবি কর্মকর্তা রাকিব ওই মামলায় আমার মাইক্রোবাসটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে জব্দ করেন। পরে আমি কোর্ট থেকে গাড়ি ছাড়িয়ে আনি। এতে আমার অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়। গত ১৯ জুলাই আমার ড্রাইভার প্রশান্ত কুমার সাহা আমাকে না জানিয়ে ঢাকার একটা ভাড়া ধরেন। চারজন যাত্রী নিয়ে তিনি মধুখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে এসআই জাকির নামে ডিবির একজন সদস্য আলী আকবর নামে অপর এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলেন। আমার গাড়িটি ঢাকা (মেট্রো-চ-৫৩-১০২০, রং মেরুন) ফরিদপুর রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পৌঁছলে একটি ডিবির গাড়ির সামনে থামে। পরে ডিবি পরিচয়ে মোটরসাইকেলে তুলে আমার ড্রাইভার প্রশান্ত কুমারকে তাদের অফিসে নিয়ে যায়। পরে আমার গাড়িটিও ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।
ছামাদ খান বলেন, এরপর গত ২০ জুলাই পুলিশ কর্মকর্তা রাকিব ফোন করে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি তা দিতে অস্বীকার করলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে এসআই জাকির আমাকে ফোন করে রাকিবের কথা বলে ফের ৭ লাখ টাকা ঘুষ চান। আমি টাকা দিতে চাইনি বলে ক্ষমতার প্রভাবে আমার গাড়িটি একটা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় তারা। যার মামলা নম্বর- ৬৪ কোতোয়ালী জি আর ৬১৭/২৩ এবং এই মামলায় আমার ড্রাইভার প্রশান্ত কুমারকে ৬ নম্বর পলাতক হিসেবে দেখানো হয়। অথচ, আমার ড্রাইভার প্রশান্ত কুমার সাহাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরদিন দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়ে পুলিশ। এ প্রমাণ ফরিদপুর জেলা এসপি অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ গত ২১ জুলাই রাতে রাকিব আমাকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে সারা জীবন জেলে রাখার হুমকি দেন। আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেন তিনি। আমি তার বিরুদ্ধে এর আগে পুলিশ প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও পুলিশ হেড কোয়ার্টারে একটি চিঠি দিয়েছি ডাক বিভাগের মাধ্যমে জিপি করে। এরপর থেকে তার দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। সেই থেকে প্রতিদিন ডিবি আমাকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। আমি জীবনের ভয়ে ঠিকমতো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছি না। যেকোনো সময় ডিবি রাকিব আমাকে মেরে ফেলতে পারেন, অথবা আমাকে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিতে পারেন।
এ সময় গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায়বিচারসহ জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেন ভুক্তভোগী ছামাদ খান।
ছামাদ খানের সব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ফরিদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কোতয়ালী জোন) মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
এব্যাপারে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করেছেন গত মাসের ১৭ তারিখে তার একটি কাগজপত্রবিহীন মাইক্রোবাস আটকায় পুলিশ। এরপর তিনি ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে সুপারিশও করান। আমরা তখন তাকে জানিয়েছি এভাবে গাড়ি ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মাইক্রোবাস ছাড়িয়ে নিতে হবে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৩
এইচএমএস/এমজে/এসএএইচ