লালমনিরহাট: সরকারি চাল শুধু বস্তা পরিবর্তন করে গুটি স্বর্ণা নামে বাজারে বিক্রি করছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার অসাধু কিছু ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, সরকার প্রতি বছর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনে।
তাই ওজন ঠিক রাখতে এবং এসব সুফল ভোগীদের মাঝে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাল বিতরণ ও বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তার উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ৩০ কেজি ওজনের চাল ক্রয় করেন। একইভাবে ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য তা সরবরাহ করা হয়।
এর বাইরে আর কোনো বস্তা ৩০ কেজি ওজনের কেনা হয় না। আর এসব চালের বস্তায় খাদ্য অধিদফতরের সিলমোহর দেওয়া থাকে। যাতে খুব সহজে তা সরকারি সম্পদ বলে চিহ্নিত করা যায়।
এসব চাল সুফল ভোগীদের কাছে বিক্রি না করে কৌশলে কালো বাজারে বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে তারা খাদ্য অধিদফতরের সিলমোহরযুক্ত বস্তা পরিবর্তন করে অন্য চাল আড়তের সিলমোহরের বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে সরবরাহ করছেন।
বেসরকারি চাল আড়তগুলোর বাজারে সরবরাহ করা চাল প্রতি ছোট বস্তায় ২৫ কেজি ও বড় বস্তা ৫০ কেজি ওজনের। ৩০ কেজি ওজন হয় শুধু সরকারি চালের বস্তার। এ কারণে চক্রটি সরকারি চালের ৩০ কেজির বস্তা পাল্টিয়ে ২৫ কেজি ওজনের নতুন বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে দেদারসে বিক্রি করছেন।
এক্ষেত্রে একদিকে যেমন সরকারি সম্পদ কালোবাজারে বিক্রি করছে, একইভাবে নিম্নমানের চালকে গুটি স্বর্ণাসহ বিভিন্ন নামে ভুয়া সিলমোহর দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করছে অসাধু ব্যবসায়ীর এ চক্রটি।
সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম চৌধুরী মোড় এলাকার মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের গুদামে গিয়ে দেখা যায়, শত শত সরকারি চালের বস্তা। তা পরিবর্তন করে ২৫ কেজি ওজনের দিনাজপুরের চিতা বাঘ মার্ক গুটি স্বর্ণা নামে প্যাকেট করা হচ্ছে। প্যাকেট শেষ হলে দ্রুতই তা চলে যাচ্ছে জেলার সব বাজারে। খুবই নিরাপত্তার সঙ্গে অনেকটা গোপনীয়ভাবেই করা হচ্ছে বস্তা পরিবর্তন ও সরবরাহের কাজ। গোপন ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারণ করা হলেও ক্যামেরা ওপেন করা যায়নি। সাংবাদিকরা চলে যাওয়া মাত্রই কৌশলে সরানো হয় সবকিছুই।
স্থানীয় একাধিক চাল ব্যবসায়ীর দাবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডির এসব চাল কম দামে কিনে শুধু বস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে অধিক মূল্যে বিক্রি করছে এ চক্রটি। এভাবে তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সম্পদ তছরুপ করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। উচ্চতর তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের মালিক অলিয়ার রহমান প্রথম দিকে ক্রেতার পরিচয়ে মুখ খুললেও পরে সাংবাদিক পরিচয়ে পুরো বিষয় গোপন করেন। প্রথম দিকে অলিয়ার রহমান বলেন, সরকারি এসব চাল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন ভাইয়ের। আমি শুধু নই, বেশ কিছু গুদামে দেওয়া আছে এসব চাল। প্রায় ২০০ টন চাল দিয়েছিল। আমরা শুধু বস্তা পরিবর্তন করে ৩০ কেজির জায়গায় ২৫ কেজি করে পাঠিয়ে দেই। তিনি কোথায় কীভাবে বিক্রি করেন আমি জানি না।
তবে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন বলেন, এসব চাল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গুদাম মালিক আমার নাম বললে হবে? আমার চাল হিসেবে তার কাছে কি ডকুমেন্ট আছে দেখেন। কোনো অডিও বা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে কি না। অলিয়ার কেন আমার নাম বলেছে তা আমি জানি না। এর সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে জোর দাবি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২৩
এফআর