বাগেরহাট: এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত, এক কথায় পুরো জেলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
অবিরাম বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন সাত হাজার ৫১০টি পরিবার। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। পাশাপাশি এক হাজার ৫৮০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
সোমবার (০৭ আগস্ট) সরেজমিনে বাগেরহাট পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের মিঠাপুকুরপাড়, খানজাহান আলী সড়ক, শালতলার মোড়, সাধনার মোড়, রাহাতের মোড়, মাছবাজার, কাঁচাবাজার, চালপট্টি, পুরাতন বাজার মোড়, বাসাবাটি, সাহাপাড়া, খানজাহান পল্লী-গোবরদিয়া, খারদ্বার, ভূমি অফিস মোড়সহ বাগেরহাট পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশকিছু সড়কে হাঁটু পানি ছিল।
মিঠাপুকুর পাড় এলাকা দিয়ে যাওয়া রিকশা চালক আলমগীর হোসেন বলেন, গেল সাতদিন ধরে বৃষ্টিতে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। সকাল থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি হওয়ার পরেও, রিকশা নিয়ে বেড়িয়েছি। লোকজন নেই, তারপরও দুই চারজন যা পাচ্ছি এই দিয়েই আজকের বাজার হবে।
ওয়ালটনের বিক্রয়কর্মী শঙ্কর ঢালী বলেন, বৃষ্টির জন্য আমাদের মত বিক্রয়কর্মীদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ বাইরে আসতে পারে না। যার ফলে আমাদের বিক্রি কম হয়। আমরা বেসরকারি চাকরিজীবী, প্রতিদিন জবাবদিহিতা করতে হয়।
বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়া ও জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বলেন, ড্রেনগুলো বন্ধ থাকার কারণে সহজেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ড্রেনগুলোয় অবৈধভাবে দোকানপাট দিয়ে বসেছে। সরকারের উচিত ড্রেনগুলোকে দখলমুক্ত করা। পৌরসভার পক্ষ থেকে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করলে, জলাবদ্ধতা কম হবে বলে মনে করেন তিনি।
শুধু বাগেরহাট পৌরসভা নয়, টানা বৃষ্টিতে মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক, বাজার এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভোগান্তি পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। মোংলা পৌরসভার মুসলিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাহমুদ হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে গেছে। ড্রেনগুলো থেকে পানি সরে না। আমরা কয়েকজন লাঠি নিয়ে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে পানি সরানোর চেষ্টা করছি।
মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি সহজে নামতে না পাড়ায়, মোরেলগঞ্জ বাজার, বারুইখালী, উপজেলা পরিষদ চত্বর, কুঠিবাড়ি, এসিলাহা স্কুল, এসএম কলেজ, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সেতারা আব্বাস টেকনিক্যাল কলেজ, রওশন আরা ডিগ্রি কলেজ, আজিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অনেকের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। পানিবন্দী রয়েছে অনেক পরিবার। পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো থাকলে বৃষ্টির পানি এত বেশি জমতে পারত না বলে জানান তিনি।
এদিকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়ার বেশকিছু এলাকায় মৎস্য ঘের ডুবে মাছ বের হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চাষিরা নেট ও পাটা দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন। বৃষ্টি দু-একদিন স্থায়ী হলে এসব এলাকার বেশিরভাগ ঘের ডুবে যাবে বলে দাবি মাছ চাষিদের।
রামপাল উপজেলার হুড়কা গ্রামের সুজন মজুমদার বলেন, ঘেরের তিন পাশে নেট দেওয়া ছিল। একপাশে নেট দিতে পারিনি। পানিতে ডুবে যাওয়ায় ওইপাশ দিয়েই মাছ বেরিয়ে গেছে। শুধু আমার ঘের নয়, এলাকার অনেকের ঘের ডুবে মাছ বেরিয়ে গেছে। রাস্তাঘাটও পানির নিচে রয়েছে।
তবে এই বৃষ্টিতে কৃষি মাঠে থাকা সবজি ও ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং আমন ধানে বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের উপকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে, ঘেরের পারে থাকা সবজির ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব কেটে যাওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। কোনো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। তবে বৃষ্টির পানি সাধারণ মানুষকে খুব ভোগাচ্ছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ভারি বৃষ্টিতে জেলার সাত হাজার ৫১০টি পরিবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। এক হাজার ৫৮০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও অসহায় মানুষদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২৩
এসআইএ