ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রজ্ঞাপন স্থগিত, হুমকিতে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৩
প্রজ্ঞাপন স্থগিত, হুমকিতে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন

ঢাকা: সম্প্রতি বাস ও ট্রাকের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) বিষয়ে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রজ্ঞাপন স্থগিতের আগে মতামত নেওয়া হয়নি এ বিষয়ে প্রধান সরকারি নীতিনির্ধারণী সংস্থা  বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি- বিআরটিএ’র।

 

প্রজ্ঞাপন স্থগিতের ফলে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যাশা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে বলে বিশেষজ্ঞ, সাধারণ যাত্রীদের মতো একই মত বিআরটিএ কর্মকর্তাদেরও।

গত ৩ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক আদেশ দিয়ে আগের প্রজ্ঞাপন স্থগিতের কথা জানিয়েছে। যদিও এর মাত্র আড়াই মাস আগে ১৭ মে প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছিল, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৬-এ অনুযায়ী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান প্রভৃতি পণ্যবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ ২৫ বছর।  

আরও বলা হয়, নির্ধারিত অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হলে মোটরযান স্ক্র্যাপ করতে হবে। নীতিমালা লঙ্ঘন করলে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এর ধারা ১০৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

আগের প্রজ্ঞাপন জারির পরে যানবাহন চলাচলের অনুমতি ও ফিটনেস সনদ বন্ধ করে দিয়েছিল (বিআরটিএ)। এরপর থেকেই পরিবহন নেতারা আয়ুষ্কাল-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিতের দাবি জানিয়ে বাসের আয়ুষ্কাল ২৫ বছর এবং ট্রাকের আয়ুষ্কাল ৩০ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, নতুন করে আদেশ দেওয়া হয়েছে আগের প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার জন্য। আমরা আগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০ বছরের বাস ও ২৫ বছরের ট্রাকের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করায় সে অনুযায়ী এখন মোটরযান অনুমোদন পাবে।

তবে বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে পরিবহন মালিকেরা বিকল্প ব্যবস্থা না করে এমন সিদ্ধান্তের তখনই বিরোধিতা করেছেন সড়কে যানবাহনের হঠাৎ করে কমে যাবে এমন আশঙ্কায়। একইসঙ্গে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সম্পর্ক থাকায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন স্থগিতের এই আদেশ দিয়েছে। এ বিষয়ে বিআরটিএ’র কাছে থেকে আগে কোনো লিখিত মতামত নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সরকারের আদেশ। বিআরটিএ পালন করবে। এর আগে যখন বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিল তখন তারা রাস্তায় এমন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল। নতুন করে ফিটনেস সনদও দেওয়া হয়নি। এখন নতুন করে আদেশ জারি হওয়ায় সেটি মেনে চলা হবে।

নতুন আদেশের ফলে পুরাতন লক্কর ঝক্কর যানবাহন  চলাচলে আর বাধা থাকবে না। এতে করে নিরাপদ সড়ক নিয়ে যে হাহাকার তা যেন থেকেই যাবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ প্রজ্ঞাপন স্থগিতের আদেশ ইতিবাচক কিছু বয়ে আনবে না বলে মতপ্রকাশ করে বলেন, এর আগে একটা কমিটি করেই এটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।  

ঢালাওভাবে সব গাড়িকে অনুমতি দেওয়ার সমালোচনা করে বুয়েট অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশ ও আবহাওয়াগত অবস্থার কারণে ২০ বছর একটি বাস বা ট্রাকের জন্য অনেক বয়স হয়ে যায়। এরপর এ যানের অবস্থা আর ভালো থাকে না। রাস্তায় দুর্ঘটনাসহ নানা অব্যবস্থাপনায় জড়িত থাকে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি। হয়ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কিছু গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতে পারে।  

প্রজ্ঞাপন স্থগিত সম্পর্কে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রজ্ঞাপন বাতিলের মধ্যে দিয়ে ঝুঁকিতে পড়লো নিরাপদ সড়ক তৈরির বিষয়টি। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এটি প্রতিবন্ধকতারও সৃষ্টি করবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২৩
এনবি/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।