ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কান্না আর শোকে গ্রামের বাড়িতে দাফন হলো সৌদিতে নিহত ৪ বাংলাদেশির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
কান্না আর শোকে গ্রামের বাড়িতে দাফন হলো সৌদিতে নিহত ৪ বাংলাদেশির নিহতের বাড়িতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

রাজশাহী: সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে চারজনই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসিন্দা। গত ১৪ জুলাইয়ের ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর বুধবার (৯ আগস্ট) তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে।

তাদের মরদেহ একসঙ্গে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। তাদের বুক ফাটা আর্তনাদে গ্রামের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

এ সময় নিহতদের বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোক আর কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবার ও স্বজনরা। পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আছে শোকের ছায়া। বাদ যোহর স্থানীয় মাঠে সবার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ তাদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আজ প্রায় ১০ মাস আগে মরিয়মের সঙ্গে মোবাইলফোনের মাধ্যমে ভিডিও কলে বিয়ে হয়েছিল সৌদি প্রবাসী রুবেল হোসাইনের। এরমধ্যে আসি আসি করেও ছুটি না পাওয়ায় বাড়ি এসে সামনাসামনি বউয়ের মুখ দেখা হয়নি তার। শেষ পর্যন্ত কর্মস্থল থেকে ছুটি হয়েছে; তবে চিরবিদায়ের ছুটি! 

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দিনগত রাতে চারজনের মরদেহ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপর বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে কফিনে করে রুবেল হোসাইনের মরদেহ আনা হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার রেখে যাওয়া নববধূ ও বোনসহ পরিবারের অন্য সবাই। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে প্রায় ছয় বছর আগে সৌদি আরবে যান রুবেল।

রুবেলের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার জানান, তিনি কলেজছাত্রী থাকা অবস্থায় দুজনের মধ্যে প্রেমবিনিময় হয়েছিল। আর মোবাইলে বিয়ের অল্প কয় মাসের মধ্যেই বিধবা হলেন! ফোনে কথা বলার সময় তিনি রুবেলের সঙ্গে রাগ দেখাতেন। বারবার দেশে আসার কথা বলতেন। তখন রুবেল তাকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতেন। ধৈর্য ধরতে বলতেন। একদিন সব স্বপ্নপূরণ হবে, দূর থেকে শুধু এ সান্ত্বনাই দিতেন। কিন্তু আজ সব শেষ!

১৪ জুলাই সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরে একটি ফার্নিচারের দোকানে অগ্নিকাণ্ডে নয়জন মারা যান। এর মধ্যে বাংলাদেশি সাতজনের মধ্যে রুবেলসহ চারজন বাগমারার বাসিন্দা। অ্যাম্বুলেন্সে করে বুধবার আনা হয় সাজেদুল ইসলাম, আরিফ ও ফারুকের মরদেহও। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পাগল প্রায় স্বজনরা। একসঙ্গে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়েই শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ একে একে সবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এফ এম আবু সুফিয়ান জানান, তাদের এ ঘটনাটি সরাসরি জেলা প্রশাসক মনিটরিং করছেন। পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিগগিরই সরকারের তরফ থেকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা তাদের পরিবারকে করা হবে।

সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরে থাকা দাম্মামের হুফুফ শহরের আহসা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকার একটি সোফা কারখানায় শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ১৫ জুলাই রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়। এতে নয়জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সাতজন হলো বাংলাদেশি।

নিহত সাতজনের মধ্যে চারজনেরই বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। এদের মধ্যে তিনজনই বাগমারার বরাইপাড়া গ্রামের। এরা হলেন- জফির উদ্দিনের ছেলে মো. রুবেল হোসাইন, জমির উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম ও শাহাদত হোসেনের ছেলে আরিফ। নিহতদের মধ্যে সাজেদুল ও আরিফ সম্পর্কে চাচা ভাতিজা আর নিহত রুবেল ছিলেন তাদের প্রতিবেশী। এছাড়া বাগমারার বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের আনিসুর রহমানের ছেলে ফিরুজ আলী সরদারও মারা গেছেন। তারা কেউ ছয়মাস আগে কেউ তিন বছর ধরে স্বপ্নের খোঁজে সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন>>
ফোনে বিয়ে, সশরীরে বউ দেখার আগেই না ফেরার দেশে রুবেল
সৌদিতে আগুনে পুড়ে নিহতদের মধ্যে চারজনের বাড়ি বাগমারায়


বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।