ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলায় নমনীয়তা নয়: তাজুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলায় নমনীয়তা নয়: তাজুল

ঢাকা: এডিস মশা বা ডেঙ্গু থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হলে কারও অবহেলার ব্যাপারে নমনীয়তা প্রদর্শন করবেন না স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। যতটুকু কঠোর হওয়ার দরকার ততটাই হবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে সারা দেশে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে বিশেষ সভার আগে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

মন্ত্রী বলেন, এডিস মশা বা ডেঙ্গু থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হলে কারও অবহেলার ব্যাপারে নমনীয়তা প্রদর্শন করতে পারব না। আমাদের কঠোর যেটুকু হওয়া দরকার সেটুকু আমরা হবো। প্রত্যেকের স্থাপনাগুলো পরিষ্কার করছেন না। এগুলো পরিষ্কার করে ফেলা হলে মশা সীমিত আকারে হয়ে যাবে। আমরা মানুষকে সচেতন করতে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রম সবই করা হচ্ছে। স্প্রে করা হচ্ছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কিছু কিছু শহরকেন্দ্রিক এডিস মশার আক্রমণ লক্ষ্য করেছি। এ বছর সারা বাংলাদেশে এডিস মশার প্রজনন পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং অনেক লোক আক্রান্ত হচ্ছে। পুলিশ স্টেশনে অনেক পরিত্যক্ত গাড়িতে মশার প্রজনন হতো। সেখানে যাতে মশা না হয় সেই ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে। এরপরেও কোনো ভবনে লার্ভা পাওয়া গেলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। একজন মানুষও আক্রান্ত না হলে সন্তুষ্ট হবো।

যা করা হচ্ছে যথেষ্ট কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় আমরা প্র্যাকটিক্যাল হই, বাস্তববাদী হই। পৃথিবীর ১৪৮টি দেশে আক্রান্ত। প্রতি বছর সাত লাখ লোক মারা যায়। সারা পৃথিবীতে মারা যাচ্ছে। পৃথিবী আক্রান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশেও আক্রান্ত হচ্ছে। সবাই এটিকে মোকাবিলা করার জন্য কাজ করছে। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত আছে। যদি আমাদের এই কার্যক্রমটা আন্তরিকভাবে করা না হতো আক্রান্তের সংখ্যা এই জায়গায় থাকতো না।

মন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই অবহিত যে, অন্যান্য বছর যদিও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কিছু কিছু শহরকেন্দ্রিক ডেঙ্গু মশার আক্রমণ আমরা লক্ষ্য করেছি। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশেই এডিস মশার প্রজনন পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং অনেক লোক আক্রান্ত হচ্ছে। এই আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দুঃখজনক মৃত্যুও হচ্ছে, যেটা আমাদেরকে ব্যথিত করছে। এই বিষয়ে সারা পৃথিবীতে যে সমস্ত প্রচলিত তথ্য-উপাত্ত আছে, এডিস মশাকে মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যেসব বিধি-বিধান আছে, সেগুলোকে আমরা অনুসরণ করছি। পৃথিবীর বিখ্যাত-বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেসব গবেষণা করেছে, আমরা সেগুলোও সংগ্রহ করেছি।

তিনি আরও বলেন, এডিস মশাকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশন এবং এর মাধ্যমে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এবার এটার আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহরকেন্দ্রিক এটার মাত্রা অতিরিক্ত। আমাদের অন্যান্য জেলা, উপজেলা, পৌরসভার অনেক জায়গায় লোক আক্রান্ত হচ্ছে। সে কারণে আমরা আজকে একটা জরুরি সভা ডেকেছি।

ডেঙ্গু নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, সরকার বা সিটি কর্পোরেশনগুলো আগে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এ ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, এটা একেবারেই ঠিক নয়। তারা যখন আমাদের সামনে বলেন, এই কথাগুলো বলেন না। আগে থেকে কী ব্যবস্থা নেবে? আমরা জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে সভা করেছি। সেই সভায় কিট তত্ত্ববিদরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তো তখন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দুর্বলতা আছে বলে বলেননি। আমাদের কোনো পদক্ষেপে ঘাটতি আছে কিনা, সেটাও বলেননি।

যে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল সেটা নেওয়া হয়েছিল দাবি করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, পুরো বছরে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সব সময় কিন্তু মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মশা এবং ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায় বৃষ্টি আরম্ভ হয় ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই থেকে। এজন্য আমরা জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে সভা করেছি। সে সভায় তো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা তো অনুপস্থিত ছিলাম না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা (ডেঙ্গু) সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। সম্পূর্ণভাবে আমাদের ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে এটা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, আজকের তথ্য হলো- পৃথিবীর ১৪৮টি দেশে ডেঙ্গু মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তো আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার সেগুলো নিয়েছি।

আর একটা পদক্ষেপ হলো- মানুষকে সচেতন করা। এই ডেঙ্গু রোগকে মোকাবিলা করার জন্য, এডিশ মশা মারার জন্য সবার অংশগ্রহণ করা। আমরা সমস্যাটা মোকাবিলা করছি কোথায়? প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্থাপনাগুলো পরিষ্কার করছেন না। যে সমস্ত লার্ভা আছে, যে সমস্ত ডিম আছে, সেগুলো যদি পরিষ্কার করে ফেলা হয় তাহলে তো মশা থাকবে না অর্থাৎ সীমিত আকারে হয়ে যাবে।

মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর অত্যন্ত পরিষ্কার শহর। আমাদের কাছে তথ্য আছে দেশটিতে এই মুহূর্তে প্রায় পাঁচ-সাত হাজারের মতো আক্রান্ত আছে। বিভিন্ন দেশেই আছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সিটি কর্পোরেশনসহ যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, সবাই মিলে আমরা যেভাবে কাজ করছি, আমি মনে করি জনগণকে যদি আরও সম্পৃক্ত করতে পারতাম, যেটার চেষ্টা আমরা অব্যাহতভাবে করছি। আমরা টেলিভিশনে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছি। কীটনাশক ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমি একটা সাধারণ পদ্ধতির কথা বলি। আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। মশারির ভেতরে অসংখ্য মশা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর স্প্রে করা হয়েছে। কয়েক মিনিট পর দেখা হয়েছে মশা মারা গেছে কিনা। একইভাবে লার্ভাও দেখা হয়েছে। সেগুলো মারা গেছে কিনা- এগুলো পরীক্ষা করে দেওয়া।

তাজুল ইসলাম বলেন, দুই কোটি মানুষের ঢাকা শহর। সারা বাংলাদেশের আউটার জেলাগুলোয় হয়তো এ প্রথম আক্রান্ত হচ্ছে। সতর্কতার জন্য একটু সময় লাগতে পারে কিন্তু ঢাকা শহরে তো আমি মনে করি সব সচেতন হয়ে যেতে পারি। এখানে সব শিক্ষিত লোকজন।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সচেতনতা আমাদের বৃদ্ধি করতে হবে ব্যাপক পর্যায়ে। আমরা যদি সচেতন না করতে পারতাম তাহলে আজকে হয়তো পাঁচ-দশ লাখ ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়ে যেত। সচেতন হয়েছে বলে (হয়নি) কিন্তু আমাদের লক্ষ্যমাত্রা যদি পৌঁছতে হয় তাহলে আমাদের সকল জনগণকে অংশগ্রহণ করতে হবে।  

সভা থেকে নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রদেরকে সংযুক্ত করা হবে। যেহেতু এডিস মশা এখন শুধুমাত্র ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সে কারণে সারা দেশব্যাপী অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এখনই কাজ করার জন্য যাতে তারা অংশগ্রহণ করেন এবং শুরু করেন। সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি সিটি কর্পোরেশনগুলোকে। অন্যান্য জেলাতেও আর্থিক এবং কারিগরি কি কি সহায়তা দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে সভায় আলোচনা হবে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
জিসিজি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।