ঢাকা: চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরের ১২তম প্রয়াণ দিবস ছিল রোববার (১৩ আগস্ট)। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো তাদের স্মরণানুষ্ঠান ‘তারেক মাসুদ চলচ্চিত্রের আদম সুরত’।
তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয় এ আলোচনা অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের আয়োজনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের প্রজেকশন হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. জসীম উদ্দীন, চলচ্চিত্র পরিচালক, গবেষক ও লেখক মনিস রফিক (অনলাইনে যুক্ত হয়ে), চলচ্চিত্র সমালোচোক মইনুদ্দীন খালেদ, প্রসূন রহমান, অপরাজিতা সংগীতা। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোরশেদুল ইসলাম।
আলোচনায় মইনুদ্দীন খালেদ বলেন, আমরা সাধারণত ধর্মের বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে চাই না। তারেক মাসুদ সেই জায়গাটাই হাত দিয়ে কাজ করলেন। সংঘাতটা দেখালেন। ধর্মীয়ভাবে কট্টোর মুসলমান আর সাধারণ মানুষের যে মন, সেখানকার চিত্রটা তুলে আনলেন। আর এমন ব্যাপারগুলোই সব থেকে বুদ্ধিদীপ্ত জায়গা তারেক মাসুদের ছবিতে। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শতাধিক ছবি হয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে চলচ্চিত্র নির্মাণের দায় হাতে গোনা যে কয়েকজন নিয়েছিল, তারেক মাসুদ তাদের অন্যতম। তার মতো ফিল্ম মেকার এদেশে ছিল বলেই এদেশের চলচ্চিত্র উন্নতি করেছে।
সভাপতি মোরশেদুল ইসলাম বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ক্ষণজন্মা দুই নক্ষত্র তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। দেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন তারেক মাসুদ। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো: মুক্তির গান, মাটির ময়না, রানওয়ে, মুক্তির কথা, আদমসুরত, নরসুন্দর। অপরদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আশফাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিওগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সবার কাছে মিশুক মুনীর নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। তারেক মাসুদের সিনেমা রানওয়ের প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন মিশুক। নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তাদের দুজনকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে সরকার।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রথার বাইরে গিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা ছিল মিশুক মুনীরের। তার বড় এক প্রমাণ কৈশর থেকেই আমরা পেয়েছি। এটা যেন তার রক্তের ভেতরই ছিল। তিনি তার প্যাশন থেকে, ভালো লাগা থেকে কাজ করেছেন অনেক। তারা দুজনেই প্রচুর ভালো কাজ দেখতেন এবং সেখান থেকে দুজনেই ভালো কাজের উদ্দোম পেতেন। নতুন করে সুন্দর কাজ করার কথা ভাবতেন। দুজনের কাজের ধারাবাহিকতা এমন ছিল যে, দুজন একসঙ্গে না হলে যেন কাজ এগোতো না। তারা উভয়েই সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তারা ভাবতেন আগামীর চলচ্চিত্রটা কেমন হবে।
আলোচনা শেষে তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় হলজুড়ে দর্শকরা তা উপভোগ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট দেখে ঢাকায় ফিরছিলেন তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ তাদের সহকর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওরের জোকা এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা বিপরীতমুখী ডিলাক্স পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলে নিহত হন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি