সিরাজগঞ্জ: প্রকল্পের নাম থাকলেও নেই কোনো অস্তিত্ব। সভাপতিই জানেন না প্রকল্পের খবর।
রোববার (১৩ আগস্ট) চৌহালী উপজেলার খাস কাউলিয়া পশ্চিম জোতপাড়া এলাকার বেল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চৌহালী উপজেলা পরিষদের রাজস্বখাতের সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ভৌতিক প্রকল্প দেখিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক সরকার ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তারা নামে বেনামে প্রকল্প কমিটি তৈরি করে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব তহবিলের সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। তবে সরেজমিনে ঘুরে এসব প্রকল্পের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কোথাও কোথাও প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে যে নাম দেওয়া হয়েছে সেই নামীয় ব্যক্তিরও অস্তিত্ব নেই। একাধিক প্রকল্পের কমিটির সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন ইউপি সদস্যদের নাম দেওয়া হলেও এদের অনেকেই বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
স্থল ইউপির সংরক্ষিত সদস্য ছালমা জাহান ও খাষপুখুরিয়া ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন বলেন, প্রকল্পের কথা বলে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি চেক নিয়েছে। তারপর আর সেই প্রকল্প সম্বন্ধে তাদের কিছু জানানো হয়নি।
২ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও কার্যালয় সজ্জিতকরণ প্রকল্পের সভাপতি দেখানো হয় স্থল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিমকে। অথচ ওই নামে কোনো ইউপি সদস্যের অস্তিত্ব নেই স্থল ইউনিয়নে।
স্থল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে সেলিম নামে কোনো ইউপি সদস্য নেই।
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনই হয়নি। সেই ভবনের সংস্কারের নামে দেড় লাখ টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সুসজ্জিত করণে ২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও ছবি ঝুলানোর বোর্ড ছাড়া কোনো কাজই করা হয়নি। উপজেলা সভাকক্ষে এসি লাগাতে ২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও এখনো কোনো এসি লাগেনি। উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী সরবরাহ বাবদ ২ লাখ ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার সেট ক্রয় বাবদ ২ লাখ টাকার প্রকল্প দেওয়া হলেও সেটার সঠিক ব্যবহার হয়নি। এসব প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব না পাওয়া গেলেও বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউএনও বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সরকারি নম্বরে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার বলেন, শতভাগ কাজ করা হয়েছে। যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সবই মিথ্যা।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসান জানান, বিষয়টি জানার পর খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছি কিছু কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ইউএনও অসুস্থ থাকায় কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। তবে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ সকালে অভিযোগের কপিটি হাতে পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। এ বিষয়ে ডিসি স্যার সিদ্ধান্ত দেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
আরএ