ফেনী: চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেবাগ্রহীতদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র স্বাস্থ্যসেবাদানকারী সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। ১৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন। হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট ডা. কামরুন্নাহার রলি সদর হাসপাতালে, সার্জিক্যাল ডা. নসরুম মাহফুজ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে, মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা শান্তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে, মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুজ্জামান, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডা. ইমরানুল হক রানা ও ডা. তানজিনা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
এছাড়া ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক গাজী আবদুল লতিফও বদলি হয়ে প্রায় ছয় মাস আগে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে চলে যাওয়ায় একমাত্র পদটিও শূন্য হয়ে আছে। ফলে বদলি ডিউটি হিসেব করলে বাকি চিকিৎসক দিয়ে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীর দীর্ঘ সারি। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। রোগীরাও অনেক অপেক্ষা করে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে অন্যত্র সেবা নিতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা মুন্সীরহাট এলাকার শফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, নিরুপায় হয়ে রোগীরা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার মানুষ।
অন্যদিকে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৮ জন স্বাস্থ্য সহকারীর মধ্যে ছয়জন রয়েছেন। দুজন স্বাস্থ্য সহকারী অফিসের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। বাকি চারজন দিয়ে ছয় ইউনিয়নের টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে গত কয়েক বছর চালক না থাকায় রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটিও পড়ে আছে। এদিকে মেডিকেল টেকনিশিয়ান শ্যামল সরকার বাগেরহাটে নতুন চাকরিতে চলে যাওয়ায় রোগীদের অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ল্যাবের পরীক্ষা করতে হচ্ছে। নেই ডেন্টাল বিভাগের টেকনিশিয়ানও।
এর আগে হাসপাতালে একদিনে নয়টি স্বাভাবিক প্রসবের কৃতিত্ব অর্জন করেছিল ফুলগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। গাইনি চিকিৎসকের বদলির কারণে হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি বছরের ৪ মার্চ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারিতে সাফল্য অর্জন করেছিল।
একদিনে নয়টি ও পরে ছয়টি নরমাল ডেলিভারির কৃতিত্ব অর্জনের ৩-৪ মাসের মাথায় গাইনি চিকিৎসকের বদলি হয়ে যাওয়ার কারণে এ সেবা থেকে বঞ্চিত ফুলগাজীবাসী।
ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শূন্য পদের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যেখানে প্রতিমাসে গড়ে ৮০-৯০টি ডেলিভারি হত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বর্তমানে গাইনি কনসালটেন্ট না থাকায় এ সেবা বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৩
এসএইচডি/আরবি