খুলনা : খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে সামনের ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও উভয় পক্ষ অনড় অবস্থানে রয়েছে। সোমবার (১৪আগস্ট) রাত থেকে বুধবার (১৬আগস্ট) গভীর রাত পর্যন্ত যেমন হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম এবং ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ ছিল তেমনি বুধবার ও দুই পক্ষ পৃথক পৃথক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজের সচিব মো: মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি মামলার এজাহার দেয়া হয়েছে কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানায়। আরজিতে চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে এতে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান না নেয়ায় বুধবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্ম ও ক্লাস বিরতি চলবে বলে জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- ছাত্রদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার, হাসপাতাল এলাকায় স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন এবং হাসপাতাল অভ্যন্তরে সরকারিভাবে ফার্মেসী স্থাপন।
অপরদিকে, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, কেএমপি কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার, সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের ভাই শেখ জালাল উদ্দিন রুবেল, নগর যুবলীগের আহবায়ক শফিকুর রহমান পলাশ এবং যুগ্ম আহবায়ক শেখ শাহজালাল সুজন হাসপাতালে ভর্তি থাকা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দেখতে বুধবার রাতে সেখানে যান। তারা আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
আহতদের গুরুতর অবস্থা দেখে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের ওপর এধরণের হামলা ন্যক্কারজনক এবং নিন্দনীয়। যারা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরণের পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মমতাজুল হককে নির্দেশ প্রদান করেন।
বুধবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে খুমেক হাসপাতালের সামনের ওষুধ ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির ব্যানারে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দ্বারা ওষুধের দোকানে ভাঙচুর ও দোকানদারদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণায় তারাও অনঢ় থাকেন।
তবে কলেজ গেটে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে গতকাল সকালে সেখানে উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা বিএমএ’র সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম ও খুলনা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ। তাছাড়া খুলনা বিএমএ’র পক্ষ থেকে গতরাতে বৈঠক করেও এ ব্যাপারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খুলনা বিএমএ’র নির্বাহী পরিষদের জরুরি সভায় উক্ত ঘটনার নিন্দা জানানো হয়। সভায় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় না আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় মেডিকেলের ছাত্র ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সকল কর্মসূচিতে খুলনা বিএমএ’র পক্ষ থেকে একাত্মতা প্রকাশ; সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ঘটনার সময় উপস্থিত পুলিশের একজন এডিসি’র নিষ্ক্রিয়তা ও মামলা গ্রহণে সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গড়িমসির বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপণসহ চার দফা সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য,(১৪আগস্ট)সোমবার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্ণারে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী কিছু ওষুধ কিনতে যান। সেখানে ৬ টাকার ওষুধ ৩০ টাকা নেয় দোকানদার। সবুজ সরকার নামের ওই মেডিকেল শিক্ষার্থী ওষুধের বেশি দাম নেওয়ার কারণ জানতে চায়। কিন্তু দোকানদার সঠিক উত্তর না দিলে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আশপাশের ওষুধের দোকানদাররা এগিয়ে আসলে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় ওষুধ ব্যবসায়ীরা এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদেরর উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ২২জন আহত হয়।
বাংলাদেশ সময়:১২১৭ আগস্ট ১৭, ২০২৩
এমআরএম/এমএম