ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষায় টিকলেও ভর্তি হতে গিয়ে ধরা পড়ল শিক্ষার্থী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষায় টিকলেও ভর্তি হতে গিয়ে ধরা পড়ল শিক্ষার্থী তন্ময় ও হাবিব

রাজশাহী: আহসান হাবিব নামে এক শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির মাধ্যমে পাস করেছিলেন। কিন্তু যাদের মাধ্যমে তিনি এ কাজ করেছিলেন তাদের চুক্তির পুরো টাকা পরিশোধ করেননি।

 

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলে ওই চক্র আহসান হাবিবকে তুলে নিয়ে একটি হলে আটকে রাখে ও পাওনা টাকা দাবি করে।

এদিকে ছেলে আহসান হাবিবকে খুঁজে না পেয়ে তার মা রাবি প্রক্টরের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর রাবি প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে ও জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রক্সি কাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে মতিহার থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় আহসান হাবিব ও তন্ময়সহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর এ পুরো ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নাম উঠে এসেছে।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বাদী হয়ে মহানগরীর মতিহার থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।  

মামলার এজহারে বলা হয়েছে- আহসান হাবিব প্রক্সি চক্রের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চুক্তি করেন। এরপর নগদ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ৬০ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। বাকি টাকা ভর্তি হওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শেষে আহসান হাবিব বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এর কারণে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন ওই চক্রের সদস্যরা। এ সময় শিক্ষার্থীর বাবার কাছে তারা আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করেন।

অভিযুক্তরা হলেন- ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আহসান হাবিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. প্রাঙ্গণ, মো. সাকিব ও রাজু। তাদের মধ্যে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আরেক অভিযুক্ত মো. রাজুর পুরো নাম রাজু আহমেদ। তিনি শেরে বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। রাজু রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে- ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসেন মো. আহসান হাবিব নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য তার মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবনে আসেন। ভর্তির পর ওই ভবনের বাইরে আসেন। আর ওইদিন দুপুরেই অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ব্যক্তি তাকে অপহরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা আবাসিক হলের ৩য় তলায় নিয়ে আটকে রাখেন। সেখানে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর বাবার কাছে ফোন করে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান।

এরপর পুলিশের সহায়তায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেখান থেকে উদ্ধার করে। এর পর জিজ্ঞাসাবাদে আহসান হাবিব পুরো ঘটনাটি জানান। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে পলাতক আসামিদের সহায়তায় অন্য একজনের মাধ্যমে প্রক্সি পরীক্ষা দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান বলেও স্বীকার করেছেন।

রাজশাহীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজনকে তাদের কাছে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে মামলাও করেছেন। তারা এখন ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।