জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক সাংবাদিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার (২১ আগষ্ট) দিবাগত রাত দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার আসিফ আল মামুন বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাত দুইটার দিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্জলন প্রোগ্রাম শেষে হলের গেস্টরুমে ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা করছিলেন ৪৭, ৪৮ ও ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সে সময় বাইরে থেকে কেউ ভিডিও করছে, এমন সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চোর চোর বলে হট্টগোল শুরু করে। তখন আসিফ এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় হলের ভেতরের দোকানে চা খাচ্ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চিৎকার শুনে আসিফ ও অমর্ত্য সেদিকে দৌড়ে যান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অন্ধকারে আসিফকে বেধড়ক মারধর শুরু করে।
আসিফ নিজেকে হলের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। মারধরের সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
হলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অতিথি কক্ষ থেকে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীরা বের হয়ে হট্টগোল শুরু করে। তখন একজনকে দৌড়ে হলের ভেতরে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করেছেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক আসিফ আল মামুন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি দোকানে চা খাচ্ছিলাম। হলে মাঝেমধ্যেই সাইকেল বা বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটে। তাই হট্টগোল শুনে কৌতুহলের কারণে মাঠে যাই। তারা এই সুযোগে আমাকে মারধর করে। প্রথমেই আমার চশমা খুলে যায়। ফলে অন্ধকারে আমি কাউকে সেভাবে চিনতে পারিনি। আমি এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মারধরে অভিযুক্তরা আমার জুনিয়র ব্যাচের। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তারা আরও বেশি মারধর করে। এমনকি আমি গেস্টরুমের আশপাশে ছিলাম কিনা, ভিডিও করছিলাম কিনা এসব নিয়ে তারা আমাকে প্রশ্ন করতে থাকে। ’
প্রত্যক্ষদর্শী অমর্ত্য রায় বলেন, আমি আর আসিফ ভাই ঘটনার একঘণ্টা আগে থেকেই একসঙ্গে ছিলাম। আমরা বটতলা থেকে একসঙ্গে হলে ফিরে চা খাচ্ছিলাম। এর মধ্যে হট্টগোলের শব্দ শুনে ভাই নিচে নামলে তাকে উপর্যুপরি মারধর করে, হট্টগোলের মধ্যে যেভাবে মারধর করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন ও ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. এজহারুল ইসলাম বলেন, আসিফের এই ঘটনায় আমি মর্মাহত। সিসিটিভি ফুটেজে কয়েকজনকে দৌড়ে যেতে দেখেছি। তবে তারা কোন প্রেক্ষিতে দৌড়ে যাচ্ছিল সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে। তদন্ত করে সেই অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয় জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, আমি শুনেছি গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক আলোচনা চলাকালে বাইরে থেকে বিনা অনুমতিতে ভিডিও করা হচ্ছিল। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারধর করেছে। ছাত্রলীগের কেউ মারধরের ঘটনায় জড়িত ছিল না। তবে সিটিটিভি ফুটেজে যেসব ছাত্রলীগের কর্মীদের দেখা গেছে তারা যদি মারধর করেছে বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩।
এমএম