ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘কমলা রাণী দিঘী’র অস্তিত্ব রক্ষার আকুতি এলাকাবাসীর

আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
‘কমলা রাণী দিঘী’র অস্তিত্ব রক্ষার আকুতি এলাকাবাসীর

নেত্রকোনা: সংরক্ষণ ও তদারকির অভাবে অস্তিত্ব হারানোর দ্বারপ্রান্তে ‘ঐতিহ্যবাহী কমলা রাণীর দিঘী’। প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্য এখন বেশিরভাগ নদীতে বিলীন।

আর বাকি অংশে আছে ফসলি জমি আর পাড়ে গড়ে উঠেছে বসতভিটা। এছাড়া কালের সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে পুকুরের একটি মাত্র পাড়।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই ঐতিহ্যবাহী কমলা রাণী দিঘী অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে অনেকের কাছে এটি সাগর দিঘী নামেও পরিচিত।

দুর্গাপুর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল এই দিঘীটি। দুর্গাপুর সদর, বিরিশিরি, চন্ডিগড় এই তিন ইউনিয়ন মিলে অবস্থিত। বর্তমানে সেটির বেশির ভাগ অংশ সোমেশ্বরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশ বন্দোবস্ত ব্যক্তি মালিকানাধীনে বসত-ভিটায় পরিণীত হয়েছে।

লোক মুখে প্রচলিত আছে যে, ১৫ শতকের শেষ দিকে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকী নাথ বিয়ে করেন কমলা দেবীকে। এরপর তাদের পরিবারে এক ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তার নাম রাখা হয় রঘুনাথ। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে প্রজাদের পানির অভাব মেটানোর জন্য একটি বিশাল বড় দিঘী খনন করেন তিনি। কিন্তু সেই দিঘীতে আর পানি উঠল না। তারপর এক রাতে রাজা স্বপ্নে দেখেন যে রাণী কমলা দেবী যদি মাঝ দিঘীতে গিয়ে পুজো দেন তাহলেই দিঘী পানিতে ভরে উঠবে। তখন রাণীও দিঘীর মাঝখানে পূজা দিতে রাজি হলেন। এরপর যখন দিঘীর মাঝখানে রাণী পূজায় বসলেন হঠাৎ দিঘীর তলার মাটি ফেটে পানি উঠতে লাগলো। পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠল দিঘী। এ-সময় সলিল সমাধি হয় কমলা রানীর।

এদিকে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলের সারা বছর লক্ষাধিক পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। তারা ঐতিহ্যবাহী এই কমলা রাণীর দিঘীটি এক নজর দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন। কিন্তু দিঘীর কোনো চিত্রই না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। তাই পর্যটক ও নতুন প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্য পরিচিত রাখতে ও এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দিঘীর অবশিষ্ট অংশ সংরক্ষণ ও স্মৃতি ফলক নির্মাণের আকুতি এলাকাবাসীর।

রাজধানীর ঢাকা ঘুরতে আসা আসিফ ইকবাল জানান, শুক্রবার ও শনিবার দুইদিনের ছুটিতে তিনি ঘুরতে এসেছিলেন। তবে এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কমলা রাণীর দিঘী দেখতে গিয়ে উঁচু একটি পাড় ছাড়া আর কোনো কিছু চোখে পড়েনি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু কমলা রাণীর দিঘীর কাহিনি অনেক প্রাচীন এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করে তাই দিঘীটির গুরুত্ব বিবেচনা করে অবশিষ্ট অংশটুকু সংরক্ষণ করা খুবই প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদির বলেন, দিঘীটির কাহিনি বাপ-দাদাদের কাছ থেকেই শুনে আসছি। এটি দিঘী নামে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে দিঘী বা পানি কোনো কিছুই নেই। বর্তমানে দিঘীটির অবশিষ্ট একটি পাড় ছাড়া আর কিছুই নেই। তবে দিঘীর একমাত্র পাড়টি দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন পাহাড়ি উঁচু টিলা। তাই সরকারিভাবে ব্যবস্থা না নিলে কমলা রাণীর দিঘী নামের ঐতিহ্যটি চিরতরে মুছে যাবে।

রঞ্জন সরকার বলেন, অনেক দূরদূরান্ত থেকে লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে দিঘীটি দেখতে আসেন। কিন্তু তারা কিছুই দেখতে না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরে যান। দিঘীটির অস্তিত্ব রক্ষায় অবশিষ্ট অংশটুকু সংরক্ষণ ও স্মৃতি ফলক তৈরির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, দিঘীটি অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আর বাকি অংশ ভরাট হওয়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীনে রেকর্ড ভুক্ত হয়ে মানুষ বসবাস করছে। তবে যেটুকু সরকারের নামে রেকর্ডে আছে, সেই অংশটুকু সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, দিঘীটির বিষয়ে জানা ছিল না। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।